শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন দাবার বোর্ডেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া আটলান্টিকে নৌকাডুবি, ৮৯ অভিবাসীর মৃত্যু মার্টিনেজের নৈপুণ্যে ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পদ্মা পাড়ে উৎসবের আমেজ সকালে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৫ ইরানে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জিতলেন টিউলিপ সিদ্দিক এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী কেন গেলেন না? ব্রিটেনের নির্বাচন: লেবার পার্টির বিশাল জয়, সুনাকের পরাজয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উত্তীর্ণ হবে ৬ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ প্রার্থী শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮১তম সভা অনুষ্ঠিত রাজধানীতে ৯ কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার কাস্টমস কমিশনার এনামুলের ৯ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ ফেনীতে বেড়িবাঁধের ১০ স্থানে ভাঙন, ৪৬ গ্রাম প্লাবিত জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বান্দরবানে বেনজীরের সম্পত্তি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে

প্রণব মুখার্জির চোখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ৪৪তম বর্ষে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে গোটা পরিবারসহ (দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে নির্মূল করার ঘটনা বেদনা ও ক্ষোভ হয়ে আমার স্মৃতিতে জেগে আছে। ঐ রাতে আমি কলকাতায় অবস্থান করছিলাম। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এই দিনে (১৫ আগস্ট) মন্ত্রীরা সাধারণত দিল্লির বাইরে যার যার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেন। আমি ছিলাম বিধানসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত রাজ্যসভার সদস্য। সে কারণে আমার কোনো সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা ছিল না। ঐ সময় আমি ছিলাম মিনিস্টার অব স্টেট ফর ফিন্যান্স। আমার অফিশিয়াল পদবি ছিল মিনিস্টার অব রেভিন্যু অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার।

২. ১৯৭৫ সালের ঐ দিনটিতে আমি ১৪ বা ১৫ আগস্ট রাতে স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের আয়োজনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমি আমার অস্থায়ী নিবাস কলকাতার নিজাম প্যালেসের সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হোস্টেলে ফিরে আসি। সকালে ঘুম ভাঙে দেরিতে। ঘুম থেকে জেগেই এই বেদনাদায়ক মৃত্যুসংবাদ শুনে ভীষণ মর্মাহত হয়ে পড়ি।

৩. মাত্র কয়েক মাস আগে বঙ্গবন্ধু বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠনের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কারে হাত দেন। তখন ক্ষমতা ছিল কেন্দ্রীভূত এবং দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল নতুন সৃষ্ট জেলায় জেলায় গভর্নর পদটির হাতে। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশ শক্ত প্রতিবাদ করে। আমরা ভাবলাম, গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় এমন দ্বিমত ও হুলস্থুল হয়েই থাকে, স্বাভাবিক বিষয়। তখন ভারতেও স্টেট অব ইমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থা চলছিল (সেটা ঘোষণা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন)।

৪. কিন্তু কেউ আমরা বিশ্বাস করিনি যে সরকারের কোনো নীতির বিরুদ্ধাচরণ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির জনককে হত্যার পর্যায়ে গড়াবে।

৫. কিছু সংবাদকর্মী যখন আমার কাছে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন, আমি তাদের এড়িয়ে গেলাম। তাদের বললাম, ‘সরকারের প্রতিক্রিয়াই আমার প্রতিক্রিয়া। সরকারের দায়িত্ব পালনরত একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি ভিন্ন কোনো মত ব্যক্ত করতে পারি না।’ কিন্তু এই হত্যাকাণ্ড আমাকে কেবল আঘাতই করেনি, আমি ভাবতে শুরু করলাম, এমন চরম ও অমানবিক কর্মের পেছনে আর কী কারণ থাকতে পারে? এমনভাবে একজন জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। এমন হূদয়বিদারক ঘটনা আমরা ভারতে দেখেছি ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন, যখন মহাত্মা গান্ধী একজন সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধের গুলিতে নিহত হন। এর আগে ১৯৪৫ সালে বার্মার অবিসংবাদিত নেতা অং সান তার কয়েকজন সহযোগীসহ নিহত হন।

৬. আমাদের উপমহাদেশে স্বাধীনতার পর অনেক রাজনৈতিক নেতা গুপ্ত হত্যার সম্মুখীন হন। কিন্তু ভারত ছাড়া আর কোনো দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মতো এভাবে জাতির জনকের হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান নিহত হন। তারপর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এস ডব্লিউ আর ডি বন্দরনায়েকে ১৯৫৯ সালে হত্যার শিকার হন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং ভারতে ১৯৮৪ সালে ইন্দরা গান্ধী নিহত হন। ঐ সময়গুলোতে ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক, ১৯৯১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা নিহত হন।

৭. বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে দেখা গেল ঐ বছরই ৩ নভেম্বর তাজউদ্দিন আহমেদ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী), এ এইচ এম কামরুজ্জামান (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), মনসুর আলী (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট)-এর মতো ব্যক্তিদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরবর্তী ঘটনাগুলো থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতৃত্বদানকারীদেরই নয়, স্বাধীনতাসংগ্রামের মূল্যবোধকে নস্যাত্ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

৮. বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেই খোন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গবন্ধুরই পছন্দের একজন প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীই ছিলেন না, সেই সঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের একজন মন্ত্রীও ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ মন্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করানো হয়। এমনকি তখনো জাতির জনকের মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়নি। অনেক প্রশ্ন ছিল, যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তখন তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের উন্মুক্ত বিচার শুরু হলে এই হূদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রের নানা দিক প্রকাশ পেতে থাকে। তাঁর হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের অনেক কিছুই এখন জ্ঞাত।

প্রতি বছর এই দিনটি ফিরে আসবে। প্রতি বছরই আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার।

বাংলা৭১নিউজ/সংগৃহিত: দৈনিক ইত্তেফাক / লেখক:ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com