সঞ্চয়পত্রে বিক্রির হ্রাস রোধে সরকার সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাশাপাশি অবসরভোগীদের সুবিধার জন্য পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি তিন মাসের পরিবর্তে প্রতি মাসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে শুধুমাত্র মহিলা এবং ৬৫ ঊর্ধ্বে নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি মাসে দেওয়া হয়ে থাকে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয়বার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায় না। আগামীতে কেউ সঞ্চয়ের বিনিয়োগ না উঠালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এতদিন ধরে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা তিন মাস পর পর সুদ বা মুনাফার টাকা পেতেন। এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের মুনাফার অর্থ দেওয়া হবে।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। সে কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা এতদিন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পেতেন না, সভায় তাদের এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পূর্ণ মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগামীতে মুনাফার হার শূন্য দশমিক ৫ ভাগ থেকে দেড় ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন এই মুনাফার হার কার্যকর করা হবে।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমাতেই সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে চাচ্ছে।
গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকেই সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়া কমিয়ে দেয়। সে বছর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ, সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য বিক্রি কমাতে গত ২০২১ সালে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। ফলে সঞ্চপত্র বিক্রিও কমে যেতে থাকে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষের হাতে বর্তমানে সঞ্চয় করার মতো তেমন কোনো অর্থ থাকছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অনেকটা ধস নামে।
উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নতুন নিয়মে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে উৎসাহ পাবেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ