বাংলা৭১নিউজ, বেনাপোল থেকে মহসিন মিলন: দেশের সর্ববৃহত স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দর’র ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৬ হাজার পন্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছ্। ফলে এই বন্দরে আমদানি রফতানি বানিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ক্রমেই আমদানি বানিজ্য কমে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধ্বস নামতে শুরু করেছে।
ওপারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট উচ্চ ডিউটি সম্পন্ন পন্য চালানগুলো কৌশলে আটকে রাখে সিরিয়ালের নামে। ফলে শুন্য ডিউটি সম্পন্ন পন্যচালানগুলো রফতানি করা হচ্ছে বাংলাদেশে। উচ্চ ডিউটি সম্পন্ন কমার্শিয়াল পন্যচালান গুলো দিনের পর দিন আটকে থাকায় ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা করে ড্যামারেজ আদায় করা হচ্ছে বাংলাদেশী আমদানিকারকদের কাছ থেকে। একটি পন্যবোঝাই ট্রাক ১০/১৫ দিন আটকে থাকায় ২০/৩০ হাজার টাকা করে ড্যামারেজ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। মোটা অংকের লোকসানের কথা ভেবে অনেকই এই পথে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে ৩০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্যহয়ে থাকে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস প্রতি অর্থ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকার রাজ¯ব আয় করে থাকে এই বন্দর থেকে। ভারতের প্রেটাপোল বন্দরে এ ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারনে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে কাস্টমস সুত্র জানায়।
বেনাপোল চেকপোস্টে নানা ধরনের বাড়তি নিয়মকানুন চালু করায় ভারত থেকে পন্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে বিলম্ব হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় এক একটি ট্রাক এন্িট্র করতে ২০ মিনিট করে সময় লাগায় সারাদিনে ট্রাক আসা কমে গেছে। ইতিপূর্বে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫’শ ট্রাক পন্য আমদানি হতো ভারত থেকে।সময় ক্ষেপনের কারনে বর্তমানে ট্রাক’র আমদানি সংখ্যা কমে গিয়ে দাড়িয়েছে ২৫০ ট্রাকে।
চেকপোস্টে বিজিবি, কাস্টমস ও বন্দর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রাট খাতায় ট্রাক এন্ট্রি করায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃস্টি হযেছে বলে অভিযোগ করা হয়। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পন্যে চট্রগ্রামে যে মূল্য বেনাপোলে তার চেয়ে বেশী মূল্যে শুল্কায়ন করায় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে চট্রগ্রাম দিয়ে আমদানি করছে।
নানা জটিলতার কারনে অধিকাংশ আমদানিকারকরা বৈধ পথে আমদানি কমিয়ে চোরাই পথে পন্য আমদানি করছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধ্বস নামতে শুরু করেছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বানিজ্য দ্রুত করন, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্চতা ও দিনের রাজস্ব দিনে আদায়ের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল গত বুধবার বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার’র দফতরে কাস্টমস ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের সাথে মত বিনিময় করেছেন।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশণার বেলাল হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ব্যাংকের কানসালটেন্ট ইভার পিটার সন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফাস্ট সেক্রেটারী গিয়াস কামাল, বিশ্ব ব্যাংকের কো অরডিনেটর নুরসাদ নাহিদ, কাস্টমস এর অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোশিয়েশন’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শামসুর রহমান, খাইরুজ্জামান মধূ, মহসিন মিলন, মতিয়ার রহমান।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়ার নিদের্শে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন আমদানি রফতানি বানিজ্য বাড়াতে দু দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেও আমদানি বানিজ্য বাড়াতে পারছেন না। বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে অবিলম্বে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করলে আমদানি রফতানি বানিজ্য বৃদ্ধি পাবে। সইে সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ড এফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানিকৃত পন্যবোঝাই ট্রাক এনট্রির নামে অহেতুক সময় নস্ট করায় সারা দিনে ট্রাক ঢোকা কমে গিয়ে রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। কাস্টমস চেকপোস্টের একটি পয়েন্টে ট্রাক এনিট্র করলে সময় যেমন বাচবে তেমনি বাড়বে আমদানি- রফতানি বানিজ্য।আমদানিকৃত পন্য’র ওপর মনগড়া মূল্য চাপিয়ে শুল্কায়ন করন ব›ধ সহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে এই বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব বলে ব্যবসায়ীরা অভিমত দিয়েছেন।
সভায় জরুরী ভিওিতে দু দেশের কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যৌথ সভা করে বিরাজমান সমস্যা নিরসন করার সিদ্ধান্ত হয়।অন্যদিকে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠন গুলো বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সাথে বৈঠক করেছেন একই দিনে।তারা দু দেশের মধ্যে কিভাবে আমদানি রফতানি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরেন কমিশনারের কাছে। তারাও যৌথ টাস্ক ফোস গঠনেরও জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের সিংহভাগ শিল্প কলকারখানা সহ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ’র কাচামাল আমদানি হয়ে থাকে। পন্য বন্দরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগায় অধিকাংশ শিল্পের কাচামালের অভাবে সময়মত বিদেশী ক্রেতাদের পন্য রফতানি করতে না পরায় অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বানিজ্যে স্থবিরতা দুর করা হবে। ভারতের কাস্টমস এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে পেট্রাপোল বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসআই