রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
আন্দোলনে আহতদের দেখতে শেখ হাসিনা বার্নে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পাকিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে ৬ সেনা ও ৮ বিদ্রোহী নিহত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই বন্ধুর মৃত্যু নেত্রকোণায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৯২৭ বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যগামীদের জন্য হচ্ছে ‘স্পেশাল লাউঞ্জ’ ‘হেলমেট বাহিনীর’ সদস্য মনিরুল অস্ত্রসহ গ্রেফতার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেফতার ‘সাধারণ মানুষ যাতে ইলিশ খেতে পারে, সেই চেষ্টা করতে হবে’ শেরপুরে বন্যায় ৪ মৃত্যু, নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাওয়ার আহ্বান সেনাপ্রধানের সারা দেশে দুই লক্ষাধিক আনসার মোতায়েন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত পলাতকদের তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পর এবার সংবিধান বাতিলের দাবি হাসনাতের সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব করেছে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি এক সপ্তাহে তেলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ ঘরেই মাদকের কারবার করতেন স্বামী-স্ত্রী, যৌথবাহিনী অভিযানে ধরা

পেঁয়াজক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা

ফ‌রিদপুর প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে
গত বছর পেঁয়াজ চাষাবাদ করে উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারেননি ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার কৃষকরা। তারপরও জীবিকার তাগিদে কাজ থেমে নেই। গেল বছরের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এবারও বিপুল পরিমাণে হালি পেঁয়াজ চাষ করছেন কৃষকরা। উভয় উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৫০৮ হেক্টর জমির মুড়িকাটা পেঁয়াজ ইতোমধ্যে উত্তোলন করে ফেলেছেন কৃষকরা। তবে মুড়িকাটায়ও উৎপাদন খরচ ওঠানো যায়নি।     

ভোক্তা চাহিদাসম্পন্ন পেঁয়াজ কৃষকদের অর্থকরী মসলাজাতীয় ফসল হওয়ায় এর চাষ করে বছরের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন কৃষকরা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হালি পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে এখানে। কিন্তু গত বছর থেকে শুরু করে বর্তমান বাজারে দামে ধস নামায় দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে পেঁয়াজ চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কৃষকদের দাবি, গতবারের চেয়ে এবার পেঁয়াজের আশানুরূপ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপর যদি ন্যায্য দাম না পান, তাহলে তাদের  পথে বসতে হবে। পেঁয়াজ চাষ থেকে বাধ্য হয়ে সরে দাঁড়াবেন তারা। 

 হালি পেঁয়াজের সবুজ গাছে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। শ্রমিকরা টেঙ্গি হাতে নিয়ে পেঁয়াজক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পেঁয়াজের চারার গোড়ার দিকে টেঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে মাটি আলগা করে দিচ্ছেন। যাতে তাড়াতাড়ি চারাগাছগুলো থেকে পেঁয়াজের গুঁটি নামতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ক্ষেতের ঘাস ও আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে।  

সালথার ঘুয়ারকান্দী গ্রামের পেঁয়াজচাষি লোকমান মোল্যা বলেন, গত বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর প্রতিবিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ মণ। উৎপাদিত প্রতিমণ কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে।

কিছু পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রির আশায় ঘরে মজুদ রাখায় শুকিয়ে অনেক ঘাটতি হয়েছে। বছরের শেষে সেগুলো প্রতিমণ বিক্রি করেছি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। এতে হিসাব করে দেখা গেছে, উৎপাদন খরচও ওঠেনি। বরং উৎপাদন খরচ বাদে বিঘায় অন্তত আট থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, এবারও চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছি। ক্ষেতের যে পরিস্থিতি তাতে ফলন তেমন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিঘায় সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ পেতে পারি। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এটা চলমান থাকলে আমরা পথে বসে যাব। সরকার যদি পেঁয়াজের দাম না বাড়ায় তাহলে আগামী বছর পেঁয়াজ চাষ করব না।

নগরকান্দার পুরাপাড়া এলাকার পেঁয়াজচাষি নুর আলম বলেন, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার আমি মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। ১২ হাজার টাকা দিয়ে ১০ মণ ছোট (গুঁটি) পেঁয়াজ কিনে এক বিঘায় জমিতে রোপণ করি। সার-ওষুধ, সেচ, শ্রমিক মজুরি ও বাজারজাত বাবদ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার ওপরে খরচ করে পেঁয়াজ পেয়েছি ৭০ মণ। প্রতি মণ পেঁয়াজ এবার বিক্রি করেছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। এতে হিসাব করে দেখা যায়, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

সালথার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনির মোল্যা বলেন, প্রতিবছর পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় কম টাকায় দেড় থেকে ২০০ মণ পেঁয়াজ কিনে ঘরে রেখে দিই। পরে দাম বাড়লে সেগুলো বিক্রি করি। বেশি লাভের আশায় গত বছরও ১০৭ মণ পেঁয়াজ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ঘরে মজুদ করে রেখেছিলাম।

কিন্তু বছর শেষ হয়ে গেলেও দাম বাড়েনি। পরে ৯০ হাজার টাকার পেঁয়াজ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার আর পেঁয়াজ কিনব না। সরকার সব কিছুর দাম বাড়ালেও কৃষকের ফসলের দাম ক্রমেই কমাচ্ছে। পাটের দাম কমার পর পেঁয়াজের দাম কমায় কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই। 

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, সারা দেশের মসলা ফসলের অন্যতম জোগানদার সালথার কৃষকরা। প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সালথায়। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টরের বিপরীতে ১০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে।

ফলনও আশানুরূপ হবে প্রত্যাশা করি। ১৩০ হেক্টর জমির মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। কিন্তু দাম না পেয়ে চিন্তিত কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেলে পেঁয়াজ চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। যা দেশের মোট উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা মেটানো এবং আমদানি ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তিলোক কুমার বলেন, নগরকান্দায় এবার সাত হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে ও আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার পেঁয়াজের গড় ফলন আশানুরূপ হবে।

আর ৩৭৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। পুরো উপজেলায় এবার প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। পেঁয়াজের বাজারমূল্য কম থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দাম ভালো পেলে আরো পেঁয়াজ উৎপাদন সম্ভব হবে ভবিষ্যতে। 

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com