♦বেসরকারি হাসপাতাগুলোয় পিপিই ছাড়াই রোগী দেখতে চিকিৎসকদের বাধ্য করা হচ্ছে
বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের ৮৫ দশমিক ৬৬ শতাংশেরই পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) নেই। আর সরকারিভাবে বিনা মূল্যে সরবরাহকৃত পূর্ণাঙ্গ পিপিই সেট পাননি ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ নার্স। যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে আবার ৮৬ দশমিক ৯৯ শতাংশই সরকারিভাবে সরবরাহকৃত পিপিইর মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিচালিত এক যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি (বিবিজিএনএস) ও সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের পক্ষ থেকে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। অনলাইনে পরিচালিত এ জরিপে অংশ নেন দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ৫৭৫ জন নার্স।
তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা উপকরণ ছাড়া কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন দেড় শতাধিক নার্স।কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন আরো তিন শতাধিক।
সরকারিভাবে সরবরাহকৃত পিপিইর মান শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। বিষয়টি নিয়ে নার্সদের অসন্তুষ্টির কথাও উঠে এসেছে জরিপে। এতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী নার্সদের ৮৬ দশমিক ৯৯ শতাংশই সরকারিভাবে সরবরাহকৃত পিপিইর মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। অন্যদিকে কভিড-১৯ ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সদের মধ্যে ৫৮ শতাংশেরও বেশি তাদের পিপিইর মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
দেশের সরকারি-সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের নিয়ে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা সংগঠন দুটির মুখপাত্র সাব্বির মাহমুদ তিহান ও হুমায়ুন কবির বলেন, এরই মধ্যে প্রায় দেড়শ নার্স করোনায় আক্রান্ত।
দুজনই মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা ও ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (আইপিসি) ট্রেনিং না থাকায় নার্সরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। সংক্রমণের হার কমাতে সরকারকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে অদূরভবিষ্যতে দক্ষ নার্সের সংকটে পড়তে পারে।
বাংলাদেশসোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্যমতে, গত বুধবার পর্যন্ত ৩৯ টি হাসপাতালের ১৫২ জন নার্সের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিন শতাধিক নার্স।
যেসব বেসরকারি হাসপাতালের নার্সদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভারকেয়ার হসপিটাল (এ্যাপোলো হসপিটাল), পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হসপিটাল, আজগর আলী হসপিটাল, মিরপুরের ডেল্টা হসপিটাল, মগবাজারের ইনসাফ বারাকা হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল ও গাজীপুরের কেপিজে হাসপাতাল।
সরকারি যেসব হাসপাতালের নার্স কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল।
এর বাইরে: বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়াণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, নেত্রকোনার কালিয়াঝুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গফুরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নরসিংদী ১০০ বেড সদর হাসপাতাল, বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তারাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কাটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জের লাক্ষাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তত একজন করে নার্স কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারি-বেসরকারি এসব হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় এর মধ্যে কয়েকটির সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে শুধু সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল শাখাকেই লকডাউন করা হয়েছে।
নার্সদের সুরক্ষার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারের সঙ্গে।তিনি বলেন, এ জরিপের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকরি হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করেছে। আমাদের নিজস্ব বরাদ্দ নেই। তার পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব পিপিই আমরা পেয়েছি, সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী নার্সদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
পিপিইর মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে চিকিৎসকদেরও।বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রশাসক ডা. নিরুপম দাস জানান, সারা দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ১৭০ ছাড়িয়েছে। এছাড়া সারা দেশে ৪০০ চিকিৎসক হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।এত সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়া ও হোম কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ পিপিইকে দায়ী করেন এ চিকিৎসক নেতা। তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের সরবরাহ করা পিপিইগুলো ত্রুটিপূর্ণ। তা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাগুলোয় পিপিই ছাড়াই রোগী দেখতে চিকিৎসকদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/সংগৃহিত: বণিক বার্তা