বাংলা৭১নিউজ, নারায়ণগঞ্জ: গুলশান হামলার ‘মূলহোতা’ তামিম চৌধুরীসহ নারায়গঞ্জে নিহত তিন ‘জঙ্গির’ বাড়িওয়ালা নূর উদ্দিন দেওয়ানকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকায় পুলিশ একটি বাড়িতে অভিযান চালালে তিন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়।
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বেশ ভেতরে পাইকপাড়ার বড় গোরস্তানের পূর্ব পাশে তিন তলার বাড়িটির উপর তলায় মাসখানেক আগে ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। আলাদা কোনো নামফলক না থাকলেও ওই এলাকার সবাই এটাকে নুর উদ্দিনের বাড়ি বলে চিনে।
দক্ষিণমুখী বাড়িটির পেছনে পুকুর রয়েছে। আর জঙ্গিরা তিন তলার উত্তর দিকে অর্থাৎ পুকুরের দিকে ভাড়া থাকতো। তাদের বাসার দরজা-জানালা সবসময় বন্ধ থাকতো।
জানা গেছে, বাড়িওয়ালা নূর উদ্দিন দেওয়ান মজুদদারির ব্যবসা করেন। তার তিন ছেলে। এলাকায় তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত নামাজ পড়েন। বাড়ির পাশে তার আরও একটি টিনশেট ঘর আছে। যেখানে প্রায় ২৬টি পরিবার থাকে।
নূর উদ্দিনের টিনশেটের ভাড়াটিয়া আমির হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে আমি এই এলাকায় থাকি। কোনোদিন তার সঙ্গে কারো কোনো ঝামেলা হতে দেখিনি।
স্থানীয়রা জানান, মূল অভিযান সকাল নয়টায় শুরু হলেও ভোররাত থেকে পুলিশের গাড়ি আসে। সকাল সাতটার দিকে পুলিশের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ওই বাসার পাশে এক দোকানি জানান, অভিযান চালানোর সময় পুলিশ তাদের দোকান বন্ধ করে দেয়ার জন্য বলে। পরে বাসায় অভিযান শুরু করে। ঘণ্টাখানেক পরে অভিযানের শেষ পর্যায়ে দুটি বিকট আওয়াজ শোনা যায়।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, তিন তলার ফ্ল্যাটে তিনটি ছোট ছোট রুম। অভিযানের সময় তিনজনই বাসায় ছিলেন। তবে বাসায় কোনো আসবাবপত্র ছিল না। একটি টেবিল ছিল। আর কিছু কাপড়-চোপড় ছিল। এছাড়া ‘জঙ্গিদের’ একটি কম্পিউটার ছিল। তারা হার্ডডিস্কসহ ভেঙে পুরো কম্পিউটার পুড়িয়ে ফেলে।
ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে নিহত তামিম চৌধুরীর ছবি দেখালেও কেউ তাকে দেখেননি বা চিনেন না বলে জানান। বাড়িওয়ালার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ফরমান দেওয়ান জানান, তারা ব্যাংক কর্মকর্তা ও ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন এই পরিচয়ে বাড়িভাড়া নেন। তিনি এই তিনজনকে দুদিন দেখেছেন রাতে মোটরসাইকেলে করে বাসায় দিয়ে গেছে, কিন্তু এ সময়ও তাদের মাথায় হেলমেট ছিল।
অভিযানের পর পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হকের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল ভাড়াটিয়াদের তথ্য পুলিশকে সরবারহ করার নিয়ম মানা হয়েছিল কি না? এর উত্তরে আইজিপি বলেন, বিষয়টি পরে দেখা হবে। তবে বাড়িওয়ালা অভিযানে পুলিশকে সহায়তা করেছে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে পুলিশের ‘অপারেশন স্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স’ অভিযানে ৯ ‘জঙ্গি’ নিহত হয়। ওই ‘জঙ্গিরা’ও নিহত হওয়ার এক মাস আগে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। তবে নিয়ম অনুযায়ী বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশকে সরবারহ না করার অপরাধে বাড়িওয়ালা আতাহার উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তার ছেলে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর নির্ধারিত ফরমে ভাড়াটিয়াদের নির্দিষ্ট তথ্য দিতে একাধিকবার অনুরোধ করেছে পুলিশ। বাহিনীটি বলছে, কোনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করলে এর মালিকও তাদের সহযোগী হিসেবে মামলার আসামি হতে পারেন।
কিন্তু পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও বাড়ির মালিকরা ভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটেদের বিষয়ে নির্ধারিত তথ্য সংগ্রহ ও স্থানীয় থানায় সেগুলো জমা দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট তৎপর নন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাংলা৭১নিউজ/কেআর