বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

পুর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৩২৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, নুরুল আলম বাকু, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ঃ যখন নানা প্রতিকুলতায় অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলার প্রকৃতি থেকে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাশফুল হারিয়ে যেতে বসেছে ঠিক সেই সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার নিভৃত পল্ল¬ীর একটি কৃষক পরিবার বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাশের আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকার মানুষের। তারা প্রমাণ করেছেন কাশ শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য্যই বৃদ্ধি করে না, জীববৈচিত্র রক্ষাসহ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থেরও যোগান দেয়। তারা কাশ আবাদের মাধ্যমেই পুর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর।
জানা গেছে, কাশ একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। সব ধরনের মাটিতেই এটি জন্মে থাকে। বাংলাদেশের সব এলাকায়ই কমবেশি জন্মে। উচ্চতায় ৭-৮ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কান্ড অনেকটা সরু আখের মত। চিবাইলে মিষ্টি স্বাদ। এর গাঢ় সবুজ রঙের লম্বা পাতার উভয় পাশের কিনারা বেশ ধারালো। হয়তবা সে কারনেই ইংরেজিতে এর নাম ইষধফু এৎধংং হয়েছে। কাশের বৈজ্ঞানিক নাম ইমপেরাটাসি লিনড্রিকা (ওসঢ়বৎধঃধপু ষরহফৎরপধ). অনেকে কাশফুল চিনলেও এ কাশের গাছ কেমন, কোথায় হয়, কতবড় হয় অনেকেই তা জানে না। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে কাশফুল একটি নাম মাত্র। এটি হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্যও হয়নি অনেকের। কাশফুল একটি পরিচিত নাম হলেও বর্তমানে বাংলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ কাশফুল। আগেকার দিনে পতিত জমি, নদীর পাড়, জমির আইল, বিভিন্ন রাস্তা, রেললাইন ও খাল বিলের ধারে প্রচুর দেখা যেত। বর্ষার শেষে এসব স্থানে হাজার হাজার শুভ্র কাশফুল ফুটে সবুজের মাঝে সাদা রঙের প্রলেপ দিয়ে প্রকৃতিতে শরতের আগমনের খবর জানান দিত। গ্রামের ছোট ছোট দুরন্ত ছেলেমেয়েরা গ্রামের পাশের কাশবনে খেলতো লুকোচুরি। আর এ কাশফুল নিয়ে খেলায় মেতে উঠতো। কালক্রমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দিতে ও বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে পতিত জমি আর নেই বললেই চলে। তাই নানাবিধ কারনে বাংলার প্রকৃতি থেকে কাশফুল হারিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সে দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।
এই কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি সাহিত্যকরা অনেক গল্প, কবিতা গান ইত্যাদি রচনা করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ছোটনদী কবিতায় লিখেছেন, চিক্ চিক্ করে বালি কোথাও নেই কাদা, দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। অপরদিকে একটি গানে লিখেছেন, আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ গেঁথেছি শেফালি মালা, নতুন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা। এ ছাড়াও কত কবি সাহিত্যিক যে এই কাশফুল নিয়ে কত গল্প, ছড়া, কবিতা ও গান রচনা করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
ঠিক যে মুহুর্তে বাংলার প্রকৃতি থেকে কাশফুলে মত বাংলার চিরায়ত ঐহিত্যবাহী ফুল হারিয়ে যেতে বসেছে ঠিক সেই মুহুর্তে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার নিভৃত পল্ল¬ী গোবিন্দপুরের মাঠে দেখা পাওয়া গেল প্রায় ২৫ বিঘা জমির কাশের বন। কাশবনের ধারে গিয়ে মনে হলো কে যেন সবুজ ফসলের মাঠ ঢেকে দিয়েছে সাদা চাদরে। এ ফুলের সৌন্দর্য যে কোন মানুষেরই মন না কেড়ে পারে না।
এ কাশবনের মালিকদেরই একজন জেলার দর্শনা বাজারের সিমেন্ট ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল হক মুক্ত বলেন, আমার দাদারা ছিলেন ৪ ভাই বর্তমানে যাদের আর কেউই আর বেঁচে নেই। এ কাশবন তাদের আমল থেকেই রয়েছে। স্বাধীনতার পরও এক প্লটে প্রায় ৫০-৬০ বিঘা জমিতে খড় ও কাশের বন ছিল। দাদারা মারা যাওয়ার পর অনেক শরিকই তাদের অংশের খড় ও কাশের জমিতে চাষ দিয়ে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। আমরা বেশ ক’জন শরিক মিলে পুর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ কাশ ও খড়ের জমি রেখে দিয়েছি। প্রতিবছর এ জমির কাশ ও খড় বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের সমস্ত জমির খাজনাসহ যৌথভাবে বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে থাকি। আমরা গত বছর এ ২৫ বিঘা জমির কাশ বিক্রি করেছিলাম ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়। আশা করছি এ বছর আরও বেশি টাকা পাওয়া যাবে। প্রতি বছর কার্তিক অগ্রহায়ন মাসের দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে এ কাশ কিনে কেটে নিয়ে যায়। এ কাশ সাধারনতঃ পান বরজের ছাউনী হিসাবে ব্যবহার হয়। এলাকায় বর্তমানে ব্যপকহারে পানের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাশের চাহিদাও বেড়েছে আগের তুলনায় কয়েক গুণ। এ কাশবনের পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে গ্রামের গরিব মানুষেরা ঘর ছাওয়ার জন্য বিনা পয়সায় এসব কাশ ও খড় কেটে নিয়ে যেত। বেশ ক’বছর আগে থেকে এ কাশ বিক্রি হওয়া শুরু হয়। আর তখন থেকে শুরু হয় এর যতœ নেয়া। এ কাশের পরিচর্যা বলতে প্রতি বছর আষাঢ় শ্রাবন মাসে কাশের ক্ষেতে জন্ম নেয়া বিভিন্ন আগাছা ও লতাপাতা কেটে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। আর ওই সময় একবারমাত্র কিছু ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া সারা বছর এতে আর কোন খরচ নেই। তিনি আরও বলেন, একটু যতœ নিলেও এ কাশও অন্যান্য ফসলের মত লাভজনক।
দেখা গেছে, খরা, বন্যা বা খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এর কোন ক্ষতি হয় না। তাছাড়া এতে পোকামাকড়ের আক্রমণেরও কোন ভয় নেই। তাই কীটনাশক বা ঔষধেরও কোন প্রয়োজন হয় না। তাই বানিজ্যিকভাবে আবাদ করলে অন্যান্য ফসলের মতো কাশও অর্থকরি ফসলের তালিকায় স্থান পেতে পারে এ মন্তব্য অনেকের। এছাড়া এই কাশবন খরগোশ, শিয়াল, খেঁকশিয়াল, বনবিড়াল, বেজি, সাপ, গুঁইসাপসহ নানা বন্যপ্রাণির বসবাসের উপযুক্ত স্থান। বিভিন্ন বন্যপ্রাণি বসবাসের উপযুক্ত স্থান হওয়ায় জীববৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এ কাশবন।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com