সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি শিশুর বিকাশের অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে সমাধানে বদ্ধপরিকর সরকার ৭ অক্টোবর বিশ্ব বসতি দিবসে সরকারের নানা কর্মসূচি গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী আটক শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত সরকারের প্রতি জি এম কাদেরের ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২২৫ বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন হচ্ছে : আসিফ ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম, পিস ৭.৫ টাকা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সুদ মওকুফ করে ঋণ রিশিডিউল করার দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০০ আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় জাইকা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডি দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ড: নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত, প্রত্যেক পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা

পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ ও নয়া বিশ্বব্যবস্থা

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ইউরোপ যদি বিশ্বমঞ্চে একটি কৌশলগত খেলোয়াড় হয়ে ওঠে, তবে এটি এই ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। একটি কেন্দ্রীভূত ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উদার মূল্যবোধের সমর্থনে পৃথিবীতে একটি সুপার জোট তৈরি হবে।

কিন্তু পশ্চিমাদের নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত রয়েছে, তা হলো তাদের ইউক্রেনে অবশ্যই সফল হতে হবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ পৃথিবীতে একটি ভূমিকম্পের মতো ঘটনা। জার্মানির বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা নিঃসন্দেহে। এই যুদ্ধ একটি যুগের যবানিকাপাত ঘটিয়েছে। তবে আমরা নতুন যে যুগে প্রবেশ করছি, সে ব্যাপারে আমরা কী বলতে পারি?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই যুগকে অর্থনীতির ওপর রাজনীতির বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। গত তিন দশক ধরে অধিকাংশ দেশের চলার পথের নীতি ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তারা বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারের নীতি গ্রহণ করেছে, যার মূল কথা হলো আরো উত্পাদন বৃদ্ধি।

এ ধরনের নীতির প্রতি জোর দেওয়া সেই সব দেশেরই সম্ভব, যেসব দেশে জাতীয় নিরাপত্তার মতো মূল ইসু্য নিয়ে তেমন কোনো উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা নেই। কিন্তু কানাডা থেকে জার্মানি-জপান প্রভৃতি উন্নত দেশ, যারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত, তারাও আজ তাদের প্রতিরক্ষানীতি ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে।

রাজনীতি যেভাবে অর্থনীতিকে টপকে যাচ্ছে, তার একটি মাত্র অংশ সামরিক নিরাপত্তা। দেশগুলো তাদের সরবরাহ চেইন ও অর্থনীতিতে আরো বিস্তৃতভাবে বৃহত্তর জাতীয় নিরাপত্তার অনুসন্ধান করছে। এই প্রবণতা কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। ব্রেক্সিট থেকে ‘আমেরিকার পণ্যই কেবল কিনুন’ আইন পর্যন্ত অনেক মুক্তবাজার দেশের গৃহীত নীতিগুলো মূলত বাজার অর্থনীতির চেয়ে লোকরঞ্জনবাদী জাতীয়তাবাদ দ্বারা বেশি প্রভাবিত।

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজ দেশের খাদ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিন বলেন, ‘চীনা খাবারের বাটিগুলো’ ‘প্রধানত চীনা খাবার দ্বারাই পরিপূর্ণ’ হওয়া উচিত।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমরা এখন বিশ্বায়নের ৩০ বছরের উলটোটা দেখতে পাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, এই তিন দশক ধরে আমেরিকান কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ডস রাশিয়ায় একটি বড় ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করেছে, কৃষক ও সরবরাহকারীদের ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। প্রায় ৮৫০টি রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে এবং একটি বিশাল গ্রাহকশ্রেণি তৈরি করেছে তারা।

যুদ্ধের কারণে সেই সব রেস্তোরাঁ এখন বন্ধ রয়েছে এবং স্থায়ীভাবে তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাশিয়ান এয়ারলাইনস এরোফ্লট সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নিজেদের পুনর্গঠিত করেছিল। এখন এই কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাসগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি করতে বা প্লেনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে অস্বীকার করছে। এমনকি এই কোম্পানি বিদেশের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইটও বন্ধ করে দিতে পারে।

এ ধরনের ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জন। এটি বিশ্বের সর্বত্র পণ্যমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেহেতু দেশগুলো স্হিতিস্থাপকতার সন্ধান করছে এবং বিদেশের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা থেকে সরে আসছে, তাই যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহে ধাক্কাটা আপাতত সাময়িক বলে মনে হলেও এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি নতুন বিশ্বের স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে পারে।

জ্বালানির ক্ষেত্রেও আমরা সম্ভবত একটি নতুন জগতের মুখোমুখি হচ্ছি, যেখানে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম থাকবে আকাশচুম্বী। এর অর্থ হলো, যে দেশগুলো হাইড্রোকার্বন উত্পাদন করে, আগামী দশকে তাদের প্রচুর নগদ অর্থ তথা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।

(ভ্লাদিমির পুতিনের রাজস্বের প্রধান উত্স তার সস্তা তেল ও গ্যাস। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এই তেল-গ্যাস শিল্প কেন বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই বোধগম্য।) ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো বিশ্বের উদ্বৃত্ত মূলধনের বিশাল উত্স হয়ে উঠবে।

নতুন যুগের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো এটি হবে পোস্ট-আমেরিকান যুগ। এর দ্বারা আমি বলতে চাই যে, গত তিন দশকের প্যাক্স আমেরিকান যুগ শেষ হয়ে গেছে। আপনি সর্বত্র এর লক্ষণ দেখতে পারেন। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের খবর অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের নেতারা কয়েক দশক ধরে তাদের নিরাপত্তার জন্য ছিল ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল।

এমন দুটি দেশ আজ এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোন ধরতেও অস্বীকার করে। পাশাপাশি বিবেচনা করুন এই বাস্তবতা যে, ইসরাইল ও ভারত পুতিনের পদক্ষেপকে আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করতে অস্বীকার করেছে এবং এই চারটি দেশই স্পষ্ট করেছে যে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাবে।

প্রথমত মনে হতে পারে, এটি আমেরিকার প্রতিকূলে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা। তবে আসলে তা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের নেতৃস্থানীয় শক্তিই রয়ে গেছে, এখনো পর্যন্ত বাকি সব শক্তি থেকে এককভাবে শক্তিশালী। এই নতুন যুগের কিছু বৈশিষ্ট্য থেকেও আমেরিকা উপকৃত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হাইড্রোকার্বন উত্পাদনকারী দেশ।

জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর জন্য ভয়ংকর পরিস্হিতি তৈরি হবে। নিজে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অঞ্চলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং তা উত্পাদন বৃদ্ধিকে আরো উদ্দীপ্ত করবে। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ভূরাজনৈতিকভাবে ওয়াশিংটনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে একটি বেকায়দা অবস্থায় ফেলেছে।

বেইজিং রাশিয়ার ক্রিয়াকলাপকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তার বিরোধ বাড়ছে। অথচ চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কঠোর চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কৌশলগত সুযোগ তৈরি হয়েছে ইউরোপের জন্য।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কয়েক দশক ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা ইউরোপ এখন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ে পরিণত হতে পারে। আমরা এখন তার কিছু লক্ষণও দেখতে পাচ্ছি। যেমন—ইউরোপীয়রা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে এবং ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত সুরক্ষিত করে আমেরিকা থেকে পাওয়া বিনা মূল্যের নিরাপত্তা যুগের অবসান ঘটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। জার্মানির অসাধারণ পরিবর্তন দিয়ে এর শুরু হয়েছে। এভাবে ইউরোপ যদি বিশ্বমঞ্চে একটি কৌশলগত খেলোয়াড় হয়ে ওঠে, তবে এটি এই ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

একটি কেন্দ্রীভূত ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উদার মূল্যবোধের সমর্থনে পৃথিবীতে একটি সুপার জোট তৈরি হবে। কিন্তু পশ্চিমাদের নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত রয়েছে, তা হলো তাদের ইউক্রেনে অবশ্যই সফল হতে হবে। সেজন্যই এই মুহূর্তের জরুরি কাজ হলো ব্যাপক ব্যয় ও ঝুঁকি বহন করে হলেও পুতিন যাতে বিজয়ী না হয়, তা নিশ্চিত করা।

লেখক: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞ।

সিএনএনের ফরিদ জাকারিয়া জিপিএস অনুষ্ঠানের

উপস্থাপক ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফাইজুল ইসলাম

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com