রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
শেয়ারবাজারে সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ইসলামী ব্যাংক ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য রাষ্ট্রকে অনন্য উচ্চতা দিয়েছে: আ স ম রব স্বৈরাচারের সহযোগী দলগুলোকে ১০ বছর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিৎ জনগণের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি: ডিএমপি কমিশনার ইউক্রেনে মেডিকেল সেন্টারে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৬ পাবনায় পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন দ্বিতীয় দিন একটি বলও মাঠে গড়ালো না প্রশাসনে আ. লীগের দোসরদের রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয় : রিজভী ঢাকায় একদিনে ট্রাফিক আইনে ৬৩৩ মামলা, জরিমানা ২৩ লাখ বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া দুই ভারতীয় আটক পুলিশে ৩৬০০ কনস্টেবল নিয়োগ, আবেদন শুরু ১ অক্টোবর বিদেশি বিনিয়োগ টানতে উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরির পরামর্শ আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান, যেতে হতে পারে কারাগারে ‘অজনা কারণে’ পেশাগত সনদ পাননি ৩ হাজারেরও বেশি নার্স চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো ভারত দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে আজও আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন

পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা:
  • আপলোড সময় বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার রয়েছেন আত্মগোপনে। তবে পরিবারটির দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কাজে লাগিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি অভিনব সব প্রতারণা করেছেন পুলিশের সাবেক শীর্ষ এ কর্মকর্তা। নিজের পুলিশ পরিচয় আড়াল করে একাধিকবার করেছেন পাসপোর্ট হালনাগাদ।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেনজীর আহমেদের পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে বেনজীর আহমেদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর সব তথ্য সামনে এসেছে। তবে কর্মকর্তারা তাদের নির্দোষ দাবি করেছেন।

 

বেনজীরের পুলিশ পরিচয় গোপন করে একাধিক পাসপোর্ট হালনাগাদ করার বিষয়টি দুদকের একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর একাধিকবার পাসপোর্ট হালনাগাদ করেছেন। এছাড়া তিনি পাসপোর্ট নবায়নে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার পরও সাবেক আইজিপি বেনজীর সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ধারী নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি ‘লাল পাসপোর্ট’। বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরি করেছেন তিনি। পাসপোর্টে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে অপরাধ করেছেন।

জানা যায়, পাসপোর্ট হালনাগাদের সময় এই অনিয়ম ধরা পড়লে একবার তা আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চিঠি দেওয়া হয় র্যাব সদরদপ্তরে। কিন্তু অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বেনজীর সব ম্যানেজ করে নেন। এমন কি নিজে পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে নেন বিশেষ সুবিধা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত সরকারি কর্মকর্তারা পূর্বানুমোদন ছাড়া বিদেশে যেতে পারেন না। এটা এড়ানোর জন্য সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট নিতে পারেন বেনজীর। এছাড়া বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তিনি যতটা সহজে বিদেশে ভ্রমণ, বিনিয়োগ ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করতে পারবেন, সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে অফিশিয়াল পাসপোর্ট করলে সে সুযোগ পাবেন না। এসব চিন্তাভাবনা করেই তিনি পুলিশ পরিচয়ে পাসপোর্ট করেননি।

পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মানুযায়ী যে কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাইলে অফিশিয়াল পাসপোর্টের পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। পাসপোর্টে পেশা হিসেবে সরকারি চাকরিজীবী কথাটি উল্লেখ করতে হয়। সরকারি চাকরি করে কোনোভাবেই বেসরকারি চাকরি বা অন্য কোনো পেশা উল্লেখ করার সুযোগ নেই।

পাসপোর্টে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। পাসপোর্ট অধ্যাদেশের ১১ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা সঠিক তথ্য লুকিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট নিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা।

বেনজীরের পাসপোর্টের ইতিবৃত্ত
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন বেনজীর। তিনি তার পুরনো হাতে লেখা পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর। সেসময় নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট না নিয়ে নেন সবুজ রংয়ের সাধারণ পাসপোর্ট। আসল পরিচয় আড়াল করে নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেন। আবেদন ফরমে পেশা হিসেবে লিখেন ‘প্রাইভেট সার্ভিস’।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ওই বছরের ১৪ অক্টোবর বেনজীরকে নবায়নকৃত এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) দেওয়া হয়। যার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছিল ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর। যদিও মেয়াদপূর্তির আগেই ২০১৪ সালে ফের বেনজীর পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন। কিন্তু এবারও যথারীতি নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেন। ২০১৪ সালে বেনজীর ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তিনি অফিশিয়াল পাসপোর্ট নেননি।

দ্বিতীয় দফায় নবায়নকৃত পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরে ২০১৬ সালে তিনি ফের পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন জমা দেন। সেসময় তিনি ছিলেন র্যাব মহাপরিচালক। সেবারও যথারীতি তিনি বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দেন তার আবেদনে। সে দফায় পাসপোর্টে বেনজীরের তথ্য গোপন ও জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে যায়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সূত্র জানায়, র্যাব মহাপরিচালকের বেসরকারি পাসপোর্ট দেখে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। কর্মকর্তারা পরে বিষয়টি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালকের নজরে আনলে বেনজীরের আবেদনপত্র আটকে যায়। তখন বেনজীরকে বিভাগীয় অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু এনওসি জমা না দিয়ে পাসপোর্ট নবায়নের চাপ দেন তিনি।

পরে সন্দেহজনক বিবেচনায় বেনজীরের বেসরকারি সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণের পক্ষে যথাযথ ব্যাখ্যা চেয়ে র্যাব সদরদপ্তরে চিঠি দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। চাপের মুখে একদিনের ব্যবধানে তাকে পাসপোর্ট দেয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ (ডিআইপি)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালে ৩০তম আইজিপি হিসেবে পুলিশ বাহিনীর প্রধান পদে দায়িত্ব নেন বেনজীর। নিয়মানুযায়ী সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসেবে তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার কথা। কিন্তু বেনজীর মর্যাদাপূর্ণ লাল পাসপোর্টও নেননি। আইজিপি হয়েও তিনি ফের বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেন।

সে সময় দেশে চালু হয় ই-পাসপোর্ট। বেনজীরের আবেদন নিয়েও দেখা দেয় জটিলতা। তা সমাধান করতে তিনি আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে যাননি। অসুস্থতার কথা বলে পাসপোর্টের ডিআইপির মোবাইল ইউনিট চেয়ে পাঠান। পরে পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়াসহ সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালের ৪ মার্চ তার আবেদনপত্র জমা হয়ে যায়। ওই বছরের ১ জুন বেনজীরের নামে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুদকে যে ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন- ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক সাইদুর রহমান, পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপপরিচালক আবু নাঈম মাসুম, অধিদপ্তরের মো. মহসিন ইসলাম, আবু মো. মোতালেব হোসেন, মুন্সী মুয়ীদ ইকরাম ও সুভাস চন্দ্র রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্য এক ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে জানা গেছে, বেনজীরের পাসপোর্ট-কাণ্ডে ওইদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনকে বেনজীরের পাসপোর্ট জালিয়াতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি । এমনকি এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহও সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বেনজীর আহমেদের পাসপার্ট জালিয়াতির গঠনা তদন্ত করছে দুদক। তারা আমাদের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছে। কোন আইডি থেকে তার পাসপোর্টটি নবায়ন করা হয়েছে সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com