বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত করেছে ভারত। প্রতিবেশী দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে ‘বিশেষ’ কিছু হয়ে উঠছে, এটা তারই ইঙ্গিত। এ চুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে জ্বালানি, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা; যার সবই একুশ শতকের ইস্যু।
দুই দেশের মধ্যকার এ চুক্তি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া রবিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরমাণু চুক্তিতে তিনটি দলিল রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত কয়েক মাস এ নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্কের যে বিরাট মঞ্চ, পরমাণু সহযোগিতা চুক্তিটি তার চিত্রমাত্র।
চুক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র বলেছে, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ, নিরাপত্তার প্রশ্নে সংবেদনশীল ও অর্থনৈতিক বিষয়ে অংশীদার।’
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন বলছে, ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিটি বাংলাদেশকে রাশিয়া থেকে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র আমদানির সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা জোগাবে। বাংলাদেশের জন্য বড় চুক্তি এটি। ভারতের জন্যও অনেকটা নতুন ধরনের চুক্তি। মূলত সব প্রকল্প একবার চালু হতে পারলে বাংলাদেশ এক দশকেই মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে অনেক এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তির খসড়া গত ৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়। বৈঠক শেষে সে সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভা বৈঠকে পারমাণবিক জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার-সম্পর্কিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে চুক্তির খসড়া অনুমোদন হয়েছে। রাশিয়া সরকারের সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘কারিগরি জ্ঞানের’ প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ বর্তমানে রাশিয়ার কাছ থেকে তা পাচ্ছে। রাশিয়ার সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে ভারতও শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার করছে, যা উত্সাহব্যঞ্জক। তাই ভারত সরকার পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দিতে চায়। বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা যাতে এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে চুক্তির খসড়া পাঠায় ভারত সরকার। ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অন কো-অপারেশন ইন দ্য পিসফুল ইউজেস অব নিউক্লিয়ার এনার্জি’ শিরোনামে ভারত সরকারের পাঠানো খসড়ায় ৪০ বছর মেয়াদে চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে পরে চুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানোর সুযোগ রেখে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে ১০ বছর মেয়াদে এ চুক্তির প্রস্তাব করে। চুক্তির খসড়ায় মোট ১৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
পরমাণু চুক্তি ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে এনেছে ভারতীয় গণমাধ্যমটি। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরার পালাটানা থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেছিলেন। ভারত ওই সঞ্চালন লাইনকে ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন ভারতের তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। ওই সফরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ডিজেল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোয় এলপিজি ও এলএনজি পরিবহন করতে চায় ভারত। ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা দিলে বিনিময়ে ঢাকাকে প্রয়োজন অনুযায়ী এলপিজি ও এলএনজির একটি অংশ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারত বাংলাদেশকে জানিয়েছে, পরবর্তী ধাপে তারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ উত্পাদন করতে চায় এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সে বিদ্যুৎ নিতে চায়। এজন্য বাংলাদেশকে প্রয়োজন অনুযায়ী সঞ্চালন লাইন থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে ভারত।
ভারত হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ভেল), রিলায়েন্স, শাপুরজি-পালোনজি ও আদানি— এ চারটি ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চায়।
স্বস্তির বিষয় হলো, দুই দেশের স্থল ও সমুদ্রসীমা এখন স্পষ্টভাবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে এটাই সত্যি যে, ভালো পাঁচিল ভালো প্রতিবেশী তৈরি করেছে।
কয়েক দিন আগেই ঢাকা সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর। একই সময় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। ভারত নিজ থেকে ঢাকার সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। যদিও তুরস্ক ঢাকার প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থলসীমান্ত চুক্তির সহজ বাস্তবায়ন বাংলাদেশে সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা সহজতর করেছে। দুই দেশই পুরনো কয়েকটি রেল যোগাযোগ চালু করতে চায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান এ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা, খুলনা-দর্শনা, পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেল যোগাযোগ অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া আগামী কয়েক বছরে ফেনী নদীতে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তির দিকে। ভারত এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিকাশমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দুই দেশই পরস্পরকে কিছু ছাড় দিতে চায়।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:টাইমস অব ইন্ডিয়া