বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো বলেছেন, শুধু উন্নত দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশও পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আইএইএ’র যে গাইড লাইন রয়েছে, বাংলাদেশ তার সঠিক পথে আছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এ কেন্দ্র শুরু করার জন্য সবসময় সহযোগিতা করবে আইএইএ।
সোমবার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সকাল ১১ টায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে আর্ন্তজাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক সম্মানিত ইউকিয়া আমানোসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার পৌঁছান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইএইএ-এর হেড ফর নিউক্লিয়ার ইনফ্রাকচার ডেভেলপমেন্ট মিলকো কোভাচেভ, বাংলদেশ এ্যাটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান ড. নাঈম চৌধুরী, মেম্বার মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, ভিয়েনার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক, প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর, প্রকল্পের রাশিয়ান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেকজেন্ডার খাজিন। এ সময় পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনশেষে প্রকল্পের কনফারেন্স রূমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই প্রকল্পের নিরাপত্তা বিষয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করবে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর দ্বারা সমন্বিতভাবে নিরাপত্তার কাজটি পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজের মধ্যে রিএ্যাক্টর বসানো একটি বড় কাজ। এই রিএক্টর বসানোর কাজ আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ইউকিয়া আমানো বলেন, আইএইএ জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এর প্রধান কাজ হচ্ছে, আইএইএ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘স্বাধীন পরমাণু শক্তির নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২’ জাতীয় সংসদে অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, এই বিল পাস প্রধানমন্ত্রী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত কনভেনশন মেনেই কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী দেশ হিসেবে যে ধরণের কারিগরি সহযোগিতা প্রয়োজন তা সবই করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তা রাশিয়ার তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি। এটি সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তি।
ইউকিয়া আমানো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিদ্যুৎ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। যার একটি হলো পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আইএইএ এর মাইলস্টোন পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করে বাংলাদেশ এই কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১০ সালে আইএইএ’র মিশন বাংলাদেশ পরিদর্শনে এসে যে শর্তগুলো দিয়েছিল ওই শর্তগুলো
বাংলাদেশ সঠিকভাবে পূরণ করছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইএইএ’র মিশন বাংলাদেশে কাজ করছে এবং তারা বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা গুলো বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিময় করছে। এই পথে থাকলে বাংলাদেশ সেরা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে এবং তার জনগণের জন্য সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে বলে তিনি অভিমত দেন।
পরে প্রকল্পের নিরাপত্তা বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এবিএম শফিউল হকের সঙ্গে এক যৌথ বৈঠকে মিলিত হন আইএইএ মহা পরিচালক।
এর আগে রোববার রাতে আইএইএর মহাপরিচালক ঢাকায় এসেছেন। সফরকালে তিনি তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সফরের দ্বিতীয় দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। তৃতীয় দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
এরপর বিকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেবে। সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করবে।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৩১টি দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হলে বাংলাদেশ হবে ৩২তম দেশ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস