বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের এ্যান্ট্রি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টি ভারতের সাথে আলোচনায় তুলে ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও ভারতের সাথে আলোচনা করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
আজ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র ২০১৭ সালের নব-নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম খানের নেতৃত্বে আগত কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তামাক ও মদ ছাড়া সকল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা প্রদান করছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অথচ পাটপণ্য রপ্তানির ওপর এ্যান্ট্রি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, অনেক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেই ভারত এখন সাড়ে ১২% হারে কাউন্টার ভেলিং শুল্ক নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতা করার কথা স্মরণ করে তোফায়েল বলেন, বাংলাদেশ বিশ^াস করে ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে এ সকল বাধা দূর করতে আন্তরিক হবে।
জাতির পিতা শূন্যহাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ২৫টি পণ্য বিশে^র ৬৮টি দেশে রপ্তানি করে আয় করতো মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ১৯৬টি দেশে ৭২৯টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ৩৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০৫-৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ মাত্র ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অথচ বর্তমান সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে। আর ২০২১ সালের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মন্ত্রী আশা করেন, ওই সময় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে রপ্তানির এ লক্ষমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৫-৬ অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মা. ডলার, এখন তা ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এখন ৭.১১ শতাংশ এবং অর্থবছর শেষে তা ৭.৫ শতাংশ হবে।
বর্তমান সরকারের সাফল্যের সাথে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাফল্যের তুলনা করে মন্ত্রী তোফায়েল আরো বলেন, তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৮.৪ শতাংশ, এখন তা কমে ২৩.২ শতাংশ হয়েছে। তখন দেশে অতিদরিদ্র মানুষ ছিল ২৪.২ শতাংশ, এখন তা ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাক্ষরতার হার তখন ছিল ৫২.৩ শতাংশ, আজ তা ৬৩.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫.৪ বছর, এখন ৭১.৬৩ বছর হয়েছে। প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার তখন ছিল ৪৮.৪ জন, এখন তা কমে ২৯ জনে এসেছে। ২০০৫-০৬ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৫ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট এখন তা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে।
ব্যবসায়ীগণ বিব্রত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোন পদক্ষেপ এ সরকার গ্রহণ করবে না জানিয়ে মন্ত্রী নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে বলেন, ব্যবসায়ীদের পরামর্শ গ্রহণ করেই সরকার কাজ করছে। চাহিদা মোতাবেক সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতাও দিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ডিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট হোসেইন এ সিকদার, সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম রেজাউল কবীরসহ পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস