সংঘর্ষ-বিরতির একাধিক উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় শিয়া-সুন্নি সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। টানা ১১ দিনের এই সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ হয়েছে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলা কয়েক দশক ধরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ফ্ল্যাশপয়েন্ট। সেখানে সশস্ত্র শিয়া ও সুন্নি মুসলিমরা জমি ও অন্যান্য স্থানীয় বিরোধ নিয়ে কয়েক দশক ধরে উপজাতি ও সাম্প্রদায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত রয়েছে।
নতুন করে সহিংসতা শুরু হয় গত ২১ নভেম্বর। সেদিন শিয়া মুসলিমদের দুটি গাড়িবহরে বন্দুকধারীদের হামলার পর সহিংসতা শুরু হয়। এতে অন্তত ৪৩ জন নিহত হওয়ায় শুরু হয় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা। এরপর থেকে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
কুররাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ওয়াজিদ হুসেন বলেছেন, গত দেড় সপ্তাহে হামলায় ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই বন্ধ করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
পাকিস্তান সরকারের একটি দল গত রবিবার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সাত দিনের সংঘাতবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন খান গন্ডাপুর কুররাম জেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসময় চলমান পরিস্থিতির উন্নয়নে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সংঘাতে জড়িতদের কাছ থেকে সব ধরনের অস্ত্র জব্দ ও সশস্ত্র অবস্থানগুলো নির্মূল করার অভিযান চালুর নির্দেশ দেন।
এছাড়া, সহিংসতার জেরে যারা বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও ‘শিগগির’ উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত নেতাদের শিগগির নতুন করে কার্যকরী সংঘর্ষ-বিরতির ঘোষণা দিতে এবং আগের সব শান্তি চুক্তির প্রতি সম্মান জানাতে আহ্বান জানান।
শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে গন্ডাপুর বলেন, “যে কেউ অস্ত্র তুলবে তাকে সন্ত্রাসী হিসাবে গণ্য করা হবে এবং তাদের ভাগ্য হবে একজন সন্ত্রাসীর মতো। শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় থাকবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এবং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা কুররামের প্রধান শহর পারাচিনারকে প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ারের সাথে সংযোগকারী প্রধান মহাসড়কটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
পারাচিনার জেলা হাসপাতালের ডা. সৈয়দ মীর হাসান বলেন, “পেশোয়ার এবং অন্য কোথাও রোগীদের বড় হাসপাতালে রেফার করার চ্যালেঞ্জের কারণে আমাদের মেডিকেল টিম সার্জারি করার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছে।”
তিনি জানান, তারা বর্তমানে প্রায় ১০০ জন আহত রোগীর চিকিৎসা করছেন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পেশাওয়ার-পারাচিনার হাইওয়ে বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন জীবন ও বাণিজ্য কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ