বাংলা৭১নিউজ,(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: দফায় দফায় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্থায়ী বেড়িবাঁধ র্নিমাণে আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাঙন পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। দ্রুততম সময়ে স্থায়ী বাঁধ র্নিমাণের নির্দেশনা প্রদান করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সবাই কথা দিয়েছেন স্থায়ী বাঁধ র্নিমাণের। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ দূরের কথা, বিগত ৫ বছর ধরে হচ্ছে না কোনো জরুরি সংস্কার কাজ। স্থানীয় বানভাসি মানুষকে দেয়া কথা কেউ রাখেনি। আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস।
২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরে বিধ্বস্ত হয় লালুয়ার ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এরপর বেশ কয়েকবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে জরুরিভাবে সংস্কার কাজ হলেও মানহীন, দুর্বল কাজের জন্য তা টেকসই হয়নি। ফলে ফি-বছর ভেঙে বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ১৭টি গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। প্লাবিত হচ্ছে ফসলি জমি, পুকুর ঘের। বছরজুড়ে অনাবাদি থাকছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এতে পেশা হারিয়ে কর্মহীন ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেক স্বচ্ছল পরিবার। দেনাগ্রস্ত অনেকই অভাবের তাড়নায় ছেড়ে গেছেন এলাকা।
সরেজমিনে লালুয়ার চারিপাড়া, পশরবুনিয়া, বানাতিপাাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাগর ও রাবনাবাদ নদের মিলন মোহনায় লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই। এর বিভিন্ন ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে নামছে ভাটার পানি। ভাটার সময়ও ফসলি মাঠে থৈ-থৈ করছে পানি। বেশির ভাগ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ বসতঘর। পুরো ইউনিয়নে চলাচলের জন্য অবশিষ্ট নেই এক ইঞ্চি অভ্যন্তরীণ রাস্তা। বানের জলে ভেসে গেছে সেতু, সাঁকো।
বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অনেক কালভার্ট। খাবার পানিসহ গো-খাদ্যের দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অশ্রিত হয়ে আছে গৃহহারা বেশ কয়েকটি পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী সুবিধাভোগী ঠিকাদার এবং পাউবো’র অসাধু প্রকৌশলীদের কারণে শুরু থেকেই বার বার সংস্কার কাজ হলেও স্থায়ী বাঁধ র্নিমাণ হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ভূমি অধিগ্রহণসহ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় লালুয়া বাঁধের স্থায়ী নির্মাণ কাজ শুরুতেই আটকে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ষাটের দশকে জলোচ্ছ্বাস থেকে পটুয়াখালী উপকূলবাসীকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয় ১৩৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
নির্মাণের পর থেকে কোনো সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণ কাজ না হওয়ায় এসব বাঁধের অধিকাংশই বর্তমানে হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে লতাচাপলী, কুয়াকাটা, ডাবলুগঞ্জ, ধুলাসর ইউনিয়নের ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতির কাজ চললেও বাঁধ ভাঙা এলাকায় হচ্ছে কোনো কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওলিউজ্জামান বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর লালুয়া ইউনিয়নের ওই এলাকার জমি অধিগ্রহণ করায় তাদের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বিগত ৫ বছর ধরে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে