বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: তুরস্কে একে পার্টির প্রায় ষোল বছরের ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট, সংসদ, রেফারেন্ডম ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মিলে মোট ১৪ টি নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতেই জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে একে পার্টি।
এরদোগানের এই বারবার বিজয়ী হওয়ার পিছনের রহস্যটা কি? এরদোয়ান কি এমন কাজ করেন/ করেছেন যা তাকে বারবার সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়? তুরস্কের মানুষের সাথে আমার যতটুকু কথা বলার কিংবা নানা বিষয় যতটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে তাতে নিন্মোক্ত কারনগুলো সামনে এসেছে-
১. এরদোগান একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন:
এরদোগান তুরস্ককে একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং এর ধারাবাহিতকতা মেইনটইন করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে বিনামূল্যে করা হয়েছে, উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
এরদোগানের সবচেয়ে সফল একটি সেক্টর হল, চিকিৎসা সেক্টর। চিন্তা করুন আপনি স্কয়ার, ইউনাইটেড কিংবা বারডেম হাসপাতাল মানের চিকিৎসা যদি ঠাকুরগাও জেলায় বসে পান, তাও বিনামূল্যে তবে আপনি কেন এরদোগানকে ভোট দিবেন না? বস্তিগুলোকে বহুতল ভবনে পরিণত করে স্বল্পমূল্যে গরিব মানুষদেরকে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক সহয়তা সকল পর্যায়ে কয়েকগুন বেড়েছে।
২. দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন:
অবকাঠামো বললে প্রথমেই আসে যাতায়াত ব্যবস্থা। লঙ্করজঙ্কর রাস্তাঘাটকে রীতিমত চারলেনের রাস্তায় পরিণত করা হয়েছে। দরুন, আপনার বাড়ির পাশের ছোট রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা। তাতে নানাবিধ সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগেছেন। হঠাৎ একজন শাসক এসে ওখানে দুইলেনের পাকা রাস্তা করে দিলো। কেমন হবে অবস্থাটা? ঠিক তাই হয়েছে।
এরদোগানরা ক্ষমতায় আসার আগে তুরস্কে ৬০০০ কিলোমিটার দুইলেনের পকা রাস্তা ছিল, সেখানে গত ১৬ বছরে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নতুনভাবে বানানো হয়েছে। পরিবহন সকল পর্যায়ে আধুনিক ও সহজলভ্য করা হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক ও মানসম্মত হয়েছে।
৩. দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া:
দেশের অর্থনীতি অনেকদূর এগিয়েছে। ইউরোপের রুগ্ন দেশ থেকে বিশ্বের অন্যতম ক্রমবর্ধমান অর্তনীতির দেশে পরিনত হয়েছে। একথায় বললে, মানুষের পকেটে টাকা আছে।
৪. সবাইকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া:
এরদোগান আসার আগের তুরস্কে হিজাবধারী ও হিজাববিহীন নারীর মর্যাদা রাষ্ট্র ও সমাজে ভিন্নরকম ছিলো, মাদরাসায় পড়ুয়া ও স্কুলে পড়ুয়াদের সুযোগ সমান ছিলোনা, চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার একেক ধরনের লোকদের (চাকুরীর ভিত্তিতে) একেক রকমের ছিল। এরকম আরো অনেক ধরনের বৈষম্য সমাজে ছিল যার মুলৎপাটন এরদোয়ান করেছেন এবং নাগরিক হিসেবে সবাই এখন সবাই সমান অধিকার ভোগ করে।
৫. রাষ্ট্র পরিচালনায় আবেগ নয়, বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া:
তুরস্কে এখনো রাষ্ট্রীয় অফিসগুলোতে আতাতুর্কের ছবি রাখা বাধ্যতামূলক। চিন্তা করতে পারেন? আতাতুর্ককে একে পার্টি এসেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেনি। তার খারাপ কাজগুলোকে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করছে।
একে পার্টি তুরস্ককে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা কখনো দেয়নি বরং ক্রমান্বয়ে ইসলামের বিধানগুলোকে রাষ্ট্রে প্রবর্তন করছে এবং ইসলাম পালনে বিধি নিষেধগুলো উঠিয়ে দিচ্ছে। তুরস্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্টিত সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে মুখে জিহাদ ঘোষণা করেনি।
বরং আগের তুরস্কে সেক্যুলারিজমের নাম দিয়ে যে জায়গাগুলোতে ধর্মকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে ধর্মকে পুন:প্রতিষ্টিত করা হয়েছে। সূত্র: এরাবিয়ান জার্নাল।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস