মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সবুজ বন ও পাহাড়ি টিলার বৈচিত্র্যময় পরিবেশের কারণে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসে বারবার। উঁচু-নিচু পাহাড় টিলার ভাঁজে ভাঁজে কালাপাহাড় সবার মন কাড়ে। অপরূপ এ পাহাড়ের রয়েছে বিস্ময়কর সাতটি ঝরনা। তাই পর্যটকদের কাছে নতুন করে যুক্ত হতে পারে আকর্ষণীয় এ কালাপাহাড়।
স্থানীয়দের কাছে ‘লংলা পাহাড়’ নামেই পরিচিত কালাপাহাড়। বাংলাদেশ জিওগ্রাফি সোসাইটির মতে, পাহাড়টি হারারগঞ্জ পাহাড় নামেও পরিচিত।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়া এ কালাপাহাড়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১১০০ ফুট। কালাপাহাড় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত। চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝরনা ও লেকসহ অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক নাম ১০০ বর্গমাইল আয়তনের এ ইউনিয়ন। কর্মধা ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ ভূমিজুড়ে কালাপাড়ের অবস্থান। কুলাউড়া থেকে আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের এ পাহাড়ের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে পড়েছে। বাকি অংশ ভারতের ঊনকোটি জেলায় অবস্থিত।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যপ্রাণী, সাপ, বানর, হাতি, হরিণসহ একসময় বাঘও ছিল কালাপাহাড়ে। সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন নামও পেয়েছে অপার সৌন্দর্যের এ পাহাড়। লংলা পাহাড়, হারারগজ পাহাড়, সাড়েরগজ পাহাড় থেকে এখন কালাপাহাড়।
বন বিভাগের কাছে পৃথিমপাশা একোয়ার্ড ফরেস্ট নামে রেকর্ডভুক্ত এ পাহাড়ে রয়েছে আকর্ষণীয় বেশ কয়েকটি ঝরনা। এখন পর্যন্ত মানুষের দর্শন পায়নি এমন বেশ কয়েকটি ঝরনাও রয়েছে এখানে।
কালাপাহাড়ের সাতটি আকর্ষণীয় ঝরনা হলো-পাষাণের ধর ঝরনা, বেলকুমা ঝরনা, জাহাজমারা বাবা ঝরনা, উপলিয়া সং ঝরনা, শোলকুটার সং ঝরনা, জাহাজমারা পাদদেশ-১ ও জাহাজমারা পাদদেশ-২ ঝরনা। এসব ছাড়াও ছোট-বড় আরও কয়েকটি জলপ্রপাত রয়েছে এ পাহাড়ে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।
দুই দশক থেকে আটকে থাকা মুরাইছড়া ইকোপার্ক কালাপাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পাহাড়ের বিচিত্র পরিবেশ মানুষের নজর কাড়লেও আধিবাসী খাসি জনগোষ্ঠীর বিরোধিতায় আলোর মুখ দেখেনি মুরাইছড়া ইকোপার্ক প্রকল্প।
ট্রাভেলার গ্রুপ অব কর্মধার গাইড ইন্তাজ আলী বলেন, একসময় আমাদের রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন ছিল লংলা পাহাড়। এখানে কয়েকটি বাঁশমহাল ছিল। প্রচুর জ্বালানি কাঠ পাওয়া যেতো। এখন অল্প জায়গা ছাড়া সবই পাহাড়ি খাসি সম্প্রদায়ের দখলে। এখানে কয়েকটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো সংরক্ষণ করতে পারলে পাহাড়ে পর্যটকদের বিপুল সমাগম হবে।
ট্রাভেলার গ্রুপ অব কর্মধারের সদস্য আক্তার হোসেন বলেন, কালাপাহাড়ে ছোট-বড় অনেকগুলো ঝরনা রয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে কালাপাহাড়।
ট্রাভেলার গ্রুপ অব কর্মধারের সমন্বয়ক প্রদীপ কুমার সিংহ বলেন, আমরা প্রকৃতির টানে একঝাঁক তরুণ বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করি। আজ কালাপাহাড়ে এসেছি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি আকর্ষণীয় অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলো দেখার পর পাহাড় ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। পাহাড় ভ্রমণের অনুপ্রেরণা জোগায়।
জাহাজমারা ঝরনা ভ্রমণ করে আব্দুল আজিজ নামের এক পর্যটক বলেন, বয়সের চাপ থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতির টানে কালাপাহাড়ে ছুটে এসেছি। তবে এখানে আসার মতো সড়কপথের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কষ্ট হয়েছে।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, কর্মধার কালাপাহাড় অনেক গুণে গুণান্বিত। পাহাড়ের চূড়া থেকে হাকালুকি হাওর দেখা যায়। এখানে অনেকগুলো ঝরনা রয়েছে, যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসে।
কালাপাহাড়কে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, পুরো মৌলভীবাজার জেলার প্রকৃতিই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকরা যাতে কালাপাহাড়ের সাতটি ঝরনায় যেতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম