দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান মহামারিকালে ঈদগুলো কেটেছে প্রায় ঘরবন্দি। সেই হিসাবে এবার অনেকটা মুক্তভাবে ঈদ উদযাপন করেছে দেশবাসী। তাই দেশের সব পর্যটনকেন্দ্রে মানুষের ঢল নামে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, মাধবকুণ্ডসহ সব জায়গা পর্যটকের পদচারণে মুখরিত।
একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে। এসব এলাকায় হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজে যেন তিলধারণের ঠাঁই নেই। এতে খুশি ব্যবসায়ীরা। করোনার যে ধকল পর্যটনের ওপর দিয়ে গেছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন তাঁরা।
কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভই বেশি পছন্দ
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে গিজগিজ করছে পর্যটক। কক্সবাজার সৈকত থেকে মেরিন ড্রাইভের পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার এলাকা এখন পুরোদস্তুর বিনোদনকেন্দ্র। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকের কাছে শহরসংলগ্ন সৈকতের চেয়ে যেন বেশি আকর্ষণীয় এখন মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ইনানী থেকে পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত।
সেই সঙ্গে রেজু ব্রিজের পাশে রূপসী গোয়ালিয়া নামে পরিচিত বান্দরবানের মতো আরেক পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে ছুটছে পর্যটকরা। সেই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া, মহেশখালী, ডুলাহাজারা শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, নিভৃতে নিসর্গসহ পাশের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি এলাকা ঘুরতে ছুটছে পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার গতকাল বিকেলে বলেন, ঈদের আগে দুই দিনেই দুই লক্ষাধিক পর্যটক ভ্রমণে এসেছে কক্সবাজারে। সব মিলে ঈদের ছুটিতে অন্তত সাত-আট লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসবে।
খুলনা থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী শাহেদ পাটোয়ারি মেরিন ড্রাইভের পাথুরে সৈকত পাটুয়ারটেক ঘুরে এসে বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতের পানির চেয়ে ইনানী-পাটুয়ারটেক সৈকতের পানি অনেক স্বচ্ছ। তাই ওই এলাকার সৈকত ভ্রমণে ভালো লাগে। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভে লং জার্নিও হয়ে গেল। ’
পর্যটকে মুখরিত কুয়াকাটা
দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে কুয়াকাটায়। গত মঙ্গলবার থেকে পর্যটক আসতে শুরু করে এখানে। সব হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে আছে ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে লেম্পুচর, ফাতরা বন, ঝাউবন, গঙ্গামতী, কাউয়ার চরসহ কুয়াকাটার সব দর্শনীয় স্থান পর্যটকের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক এহতেশাম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা পরিবারের সব সদস্য কুয়াকাটা এসেছি ঈদের আনন্দ উপভোগের জন্য। কেননা কুয়াকাটা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। ’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ব্যবাসায়ীরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন। দুই বছরের লোকসানের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।
মাধবকুণ্ডে পর্যটকদের ভিড়
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সবার মুখে হাসি ফিরেছে।
বেড়াতে আসা তরুণ ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ বলেন, ‘ঈদে অবসর থাকায় ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানকার ব্যবস্থাপনাটা আরো ভালো করা দরকার। তাহলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। ’
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের চা-বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফিনলে চা-বাগানের ভেতরে ডিনস্টন সিমেট্রি, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বড়লেখায় হাকালুকি হাওর, রাজনগর উপজেলার কমলা রানীর দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর, মৌলভীবাজার সদরে বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক, জুড়ী উপজেলায় কমলার বাগানসহ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন, কুলাউড়া উপজেলার গগনটিলা ও কালাপাহাড়ে এসেছে বিপুলসংখ্যক পর্যটক।
বান্দরবানের আকর্ষণ নীলাচল-নীলগিরি
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে জেলা সদরের আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নানা বয়সী মানুষের ভিড়ে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। যশোর থেকে আসা রাশেদুল আমিন জানান, তাঁরা ২১ জনের দল নিয়ে এসেছেন। থানচির বড় পাথর, তিন্দু, রেমাক্রি ও আমিয়াখুম ঘুরে দেখবেন।
পর্যটকের ভিড় জমে উঠেছে জেলা সদরের নীলাচল, মেঘলা, শৈল প্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরিসহ বিভিন্ন স্পটে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বান্দরবান রিজিয়নের পুলিশ সুপার আবদুল হালিম জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁরা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দায়িত্ব পালন করছেন।
হোটেল-মোটেল খালি নেই খাগড়াছড়িতে
খাগড়াছড়ির সব পর্যটনকেন্দ্র এখন পরিপূর্ণ। জেলায় অনেকগুলো পর্যটনকেন্দ্র থাকলেও সব কিছু ছাপিয়ে পর্যটকদের অপার আকর্ষণ এখন আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, আলুটিলার ব্যতিক্রমী ব্রিজ, রহস্যময় গুহা ও রিছাং ঝরনা। শহরের অদূরে পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত জেলা পরিষদ পার্ক, ঝুলন্ত সেতু, নয়নাভিরাম লেকও পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।
খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জানিয়েছেন, ঈদের দুই দিন জেলার বাইরের পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও এখন তা বাড়ছে। একই তথ্য জানালেন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার মজুমদার। তিনি জানান, আগামী কয়েক দিন কোথাও হোটেল-মোটেলে সিট খালি নেই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ