বিধিনিষেধ ওঠার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাণ ফিরেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পর্যটনে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ খৈয়াছড়া ঝরনার এখন ভরা যৌবন। মহামায়া লেকেরও তাই। অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোও মুখরিত পর্যটকদের পদচারণায়।
টানা সাড়ে চারমাস বন্ধ থাকার পর মহামায়া লেক, মহামায়া সেচ প্রকল্প, আরশিনগর ফিউচার পার্ক ও খৈয়াছড়া ঝরনা খুলে দেওয়ায় এসব দর্শনীয় স্থানের ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন।
মহামায়া লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী কামরুন নাহার বলেন, প্রায় এক বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা হয় না। ঘরবন্দি থেকে অতিষ্ঠ। তাই দুই সন্তান ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি।
ফেনী থেকে খৈয়াছড়া ঝরনায় পিকনিক করতে আসা ওমর ফারুক সোহেল বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে এখানে পিকনিক করার প্রস্তুতি নেই। কিন্তু লকডাউন থাকায় তা আর হয়ে ওঠেনি। এখন সবাই মিলে খৈয়াছড়া ঝরনায় পানির অবিরাম শব্দ উপভোগ করছি। সবকিছুই প্রাকৃতিক হওয়ায় ভালো লাগছে।
‘তবে মহাসড়ক থেকে খৈয়াছড়া ঝরনা পর্যন্ত দুর্গম এলাকার অনেকাংশে কাদামাটিতে একাকার হয়ে আছে। ঝরনা পর্যন্ত পর্যটকদের পৌঁছানোর সু-ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। এখানকার হোটেলগুলোও এখনো পুরোদমে চালু না হওয়ায় আগত পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে।’
খৈয়াছড়া ঝরনার টিকিট কাউন্টারে থাকা কর্মচারী মাহবুব হোসেন বলেন, ১৯ আগস্ট সরকারি ঘোষণার পর কাউন্টার খোলা হয়েছে। এখনো পুরোদমে দর্শনার্থীর আগমন শুরু হয়নি। শিগগির দর্শনার্থীদের চলাচলের জায়গাগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকেই ধুঁকছে দেশের পর্যটনশিল্প। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দেশের সবগুলো দর্শনীয় স্থান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দর্শনার্থীর আগমন না থাকায় হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার পেশা পাল্টিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পর্যটন শূন্যতায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দর্শনীয় স্থানের ইজারাদার ও বিনিয়োগকারীরা।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মিরসরাই উপজেলায় ৮টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে মহামায়া ইকোপার্কটি ভ্যাটসহ ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইজারা নেন এএইচ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বারইয়াঢালার খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকা মেসাস রেড চিলি এন্টারপ্রাইজকে ১২ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। নাসির উদ্দিন দিদারের ব্যক্তিগত বিনিয়োগে গড়ে ওঠে আরশি নগর ফিউচার পার্ক। বাকি পাঁচটি দর্শনীয় স্থানও সব সময় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
মহামায়া ও খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকার ইজারাদার নাজমুল হাসান পিন্টু জানান, আগামী বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহামায়া লেকের ইজারার মেয়াদ রয়েছে। শীতকালে এ স্থানের ইজারার আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু ২০ আগস্ট খৈয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ইজারার মেয়াদ শেষ। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন বিভাগ থেকে করোনাকালীন যে সময়টুকু উদ্যানে দর্শনার্থী বন্ধ ছিল সে সময়ের জন্য অতিরিক্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, ইজারার মেয়াদ বাড়ানোর পরও খৈয়াছড়া এলাকাটি নিয়ে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে। ঝরনায় পানি শুকিয়ে গেলে এলাকাটি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে আরশি নগর ফিউচার পার্কের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন দিদার জানান, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে পার্ক স্থাপন করেছি। কিন্তু করোনাকালে বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারছি না। সম্প্রতি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হওয়ায় কিছু দর্শনার্থীর আগমন হচ্ছে। কিন্তু কতটুকু আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ