বাংলা৭১নিউজ, চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান: মার্চ-এপ্রিল দু’মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ মে থেকে পদ্মা-মেঘনায় মাছ শিকার শুরু করেছে চাঁদপুরের জেলেরা। ৩০ এপ্রিল মধ্য রাত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিলো। চাঁদপুর নৌ- সীমানায় নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ দু’ মাস অলস সময় কাটানোর পর মাছ ধরতে নদীতে নামছে ৪১ হাজার জেলে। এ কারণে স্বস্তিফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের দাবি জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।
জাটকা সংরক্ষণের জন্যে সরকার দু’ মাস চাঁদপুরসহ দেশের আরো কয়েক স্থানে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যে কোনো ধরনের মাছ আহরণ,পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিলো। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।
জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর অক্টোবরে মা ইলিশ রক্ষায় ১৫ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কি.মি. এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৬০ কি.মি.পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৪১ হাজার ১শ’ ৮৯ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে। বাধাহীন নদীতে মাছ ধরতে পারবে তাই জেলেদের মনে কর্মোদ্দীপনা ফিরে এসেছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকায় জেলেপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নামছে। অনেকেই এখনো নৌকা ও জাল মেরামত করছে। জেলে পাড়ার মোস্তফা বেপারী জানান, ১০ দিন আগে পদ্মা- মেঘনার পানি ছিলো পরিস্কার। কিন্তু এখন গোলা। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলো প্রশাসন। যদিও আটককৃতদের অধিকাংশই হচ্ছে অন্যান্য জেলার। আগামী বছর ইলিশ উৎপাদনের ওপর নির্ভর করবে কর্মসূচির সফলতা। যদিও এ কর্মসূচি সফল করায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকতা মো.আসাদুল বাকী। তিনি আরো জানান, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নিচের সাইজের ইলিশ ধরা নিষেধ।
প্রবীণ জেলে ইমান হোসেন বেপারী জানান,পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরও দু’মাস বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামছে জেলেরা।
সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তায় প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দিলেও জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন করেছে। ফলে এ বছর জাটকা নিধনের কারণে ইলিশের আকাল দেখা দেবে এমন আশঙ্কা সচেতন মহলের।
দু’মাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে এবং জাটকা রক্ষায় ৩ শ’৪৯ টি অভিযানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন ।
এতে ১১৫ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ১শ’ বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয় । অভিযান চালিয়ে ১২ হাজার ৪ শ’ ২ কেজি জাটকা আটক করে গরিব-দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/জেডএস