বাংলা৭১নিউজ, মোঃ লিহাজ উদ্দীন মানিক, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : বোদা উপজেলা সহ পঞ্চগড় জেলা থেকে গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। গরুর গাড়ী এককালে এ অঞ্চলে বিত্তশালীদের রাজকীয় বাহন ছিল। তাছাড়া মালামাল বহনে গরুর গাড়ী ছিল একমাত্র বাহন।
তখন এই সময়ের মত যান্ত্রিক কোন গাড়ী ছিল না। ছিল না এখনকার মত রাস্তা ও সড়ক ব্যবস্থা। এক সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজা রানীর সাজে সজ্জিত করে বর কনেকে গরুর গাড়িতে করে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হত। এই গরুর গাড়িতে করে কনে অথবা বরের বাড়িতে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন হত। এখন বিয়ে ও নানা অনুষ্ঠানের কাজ কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আর বর কনে আনার জন্য আধুনিক গাড়ি ব্যবহার করা হয় না। সভ্যতার ক্রমবিকাশে, রাস্তা ঘাট ও সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক উন্নয়নের কারনে এ অবস্থা পাল্টে গেছে। বর্তমানে রাজকীয কোন বিয়ে অনুষ্ঠান করতে বর ও কনে আনতে গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আর এ সময় কোন বিয়ে অনুষ্ঠানে গরুর গাড়ি ব্যবহার করতে দেখলে উৎসুক জনতা তা দেখার জন্য ভীড় করে।
নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে ছুটে যায় গরুর গাড়ি দেখতে। জানা গেছে এক সময় আয় উর্পাজনের জন্য গরুর গাড়ি চালানোকে অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহন করত। রাস্তা দিয়ে গরুর গাড়ি আসা যাওয়ার সময় বিশেষ করে রাতে গ্রামবাসীর ঘুম ভেঙে যেত গরুর গলার ঘুংগুরা ও গাড়ির চালকের শব্দে।
অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে গাড়ি গর্তে পড়ে গেলে চালকসহ রাস্তায় চলাচলরত লোকজন মিলে গাড়ী তুলে নেওয়া হত। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় গরুর ক্ষুধা লাগলে চালক কোন স্থানে গাড়ি দাড় করিয়ে গরুকে খাবার দিত। ধানের খড় ও ভাতের মার ছিল গরুর প্রধান খাদ্য।
গরুর গাড়ির প্রচলনের সময় অনেকে গাড়ি তৈরী করে সংসার চালাত। গাড়ি তৈরীর কারিগরগুলো ছিল অভিজ্ঞ নিপুন শিল্পী। সেই সময় গাড়ির জন্য বলবান গরুর কদর ছিল অত্যধিক। উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর থেকে গ্রামের দোকানগুলোতে মালামাল আনতে গরুর গাড়ী ব্যবহার হত।
বর্তমানের মত নগরীর এই বাণিজ্যিক এলাকায় ট্রাকের মত গরুর গাড়ি মালামাল বোঝাই করার জন্য লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকত। গ্রামের দোকানের মালিক মালামাল পাইকারী দোকান থেকে খরিদ করে দিলে দোকানের কর্মচারী ও গাড়ী চালক মালামালগুলো নিজ দায়িত্বে গাড়িতে তুলে নিত।
দূরদূরান্ত থেকে এখানে গাড়ি তৈরীর জন্য লোকজন আসত। বোদার হাটে গাড়ি তৈরীর প্রধান উপকরন গাছ ছিল সহজলভ্য। তাই গরুর তৈরীতে এই এলাকায় অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহন করত। গরুর গাড়ির প্রচলন আধুনিক যান্ত্রিক যানের কারণে উঠে গেছে। তাই গাড়ি আর তৈরী হয় না।
ফলে গরুর গাড়ি তৈরীর কারিগররা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি দিনে আর পরিশ্রমের কাজ এখন আর তেমন কেউ করতে চায় না। গরুর গাড়ি রাস্তায় চলতে গিয়ে চাকার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য চর্তুদিকে লোহার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হত। কামার সম্প্রদায় লোকজন এ কাজ করত। আধুনিক প্রযুক্তি সকল যন্ত্রপাতির কাছে প্রতিযোগীতায় ঠিকতে না পেরে গরুর গাড়ী হারিয়ে গেছে।
এখন গরুর গাড়ীর স্থান দখল করেছে আধুনিক যান্ত্রিক গাড়ি। আরো কিছু দিন পরে নতুন প্রজম্ম গরুর গাড়ির দেখতে ছবি কিংবা কোন কারুশিল্পীর কারু কার্যে অথবা যাদুঘরে রক্ষিত কাঠের তৈরী গাড়ি দেখতে পাবে। গরুর গাড়ি বর্তমানে প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে অতীতের স্মৃতি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস