বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: ভারতে ঢুকে পড়েছে পঙ্গপালের দল। রাজস্থান থেকে গুজরাট ছেয়ে গিয়েছে পঙ্গপালে। মহারাষ্ট্রেও ঢুকেছে আরেকটি দল। এ বার তাদের লক্ষ্য দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কতটুকু নিরাপদ? এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে পঙ্গপাল মোকাবেলায় সরকার এখন পর্যন্ত কোন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঙ্গপাল মোকাবেলায় সরকার আগাম প্রস্তুতি না নিলে তা করোনার ভয়াবহ রূপ নেবে এবং দেশে বড় ধরণের খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, ভারতে পঙ্গপালের ব্যপারে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে প্রথম পঙ্গপাল দেখা গিয়েছিল এপ্রিল মাসে। রাজস্থানে জয়সলমিরের মরুভূমিতে। কিন্তু সংখ্যায় তারা খুব বেশি ছিল না। মাত্র কয়েক মাসে সেই পঙ্গপালের দল যে এ ভাবে জয়পুরে চলে আসবে, প্রাথমিক ভাবে আশা করেনি প্রশাসন। তবে পঙ্গপালের আক্রমণে যে এ বছর যথেষ্ট ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে, তা আগেই জানিয়েছিলেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। তাঁদের বক্তব্য, গোড়াতেই পঙ্গপালদের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করতে না পারলে সমূহ বিপদ।
সোমবার জয়পুরে হামলা চালানোর পরে দ্রুত গুজরাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপালের দল। একটি দল পৌঁছে গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশেও তারা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে গতিতে এগোচ্ছে পঙ্গপালরা তাতে মনে হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই তারা রাজধানী দিল্লি পৌঁছে যাবে।
সাধারণত, খেতের ফসল নষ্ট করে এই পঙ্গপালরা। শীতটা মরুভূমিতে কাটিয়ে ফসল তোলার সময় তারা চলে আসে লোকালয়ে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর ভারতে বিষয়টি একটু অন্যরকম ঘটেছে। প্রতি বছর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের মরুভূমি থেকে পাকিস্তানের দিকে চলে যায় পঙ্গপালরা। রাজস্থান এবং গুজরাটের দিকেও রবি ফসল তোলার সময় এদের মাঝে মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু সংখ্যায় খুব বেশি নয়। এ বছর ফসল তোলার পরে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়েছে ভারতের দিকে। ফসলের জমি নয়, বিশাল সংখ্যা নিয়ে তারা হামলা চালাচ্ছে শহরাঞ্চলে। সমস্ত সবুজ ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হাওয়া অনুকূল হলে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই পঙ্গপালরা। শুধু তাই নয়, সাধারণ খেতের পঙ্গপালের সঙ্গে আকারেও তফাত রয়েছে এই মরু পঙ্গপালের।
যে ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে এই পঙ্গপালের দল, তাতে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা দিল্লি পৌঁছে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দিল্লির বিস্তীর্ণ সবুজাঞ্চল এরা নষ্ট করে দিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ৫০০টা পর্যন্ত ডিম হয় এক একটি মেয়ে পঙ্গপালের। ফলে শহরাঞ্চলে যদি তাদের থেকে যেতে দেওয়া হয়, তা হলে আগামী ফসলের মরশুমে অন্তত কয়েকশ গুণ বেশি পঙ্গপাল দেশের জমিতে আক্রমণ চালাবে এবং ফসল নষ্ট করবে। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। গোটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতেও তা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তা হলে উপায়? কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার কয়েক দিন আগে একটি বৈঠক করেছেন। বলা হয়েছে রাজস্থানে ২১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা শুরু হয়ে গিয়েছে। পঙ্গপালরা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশেও একই কাজ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও নিয়মিত কীটনাশক ছড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য থেকে ৬০টি বিশেষ ধরনের স্প্রে করার যন্ত্র আনানো হচ্ছে। দেশে ওই ধরনের ৫০টি যন্ত্র আছে।
তবে কি চলতি মরশুমে পঙ্গপালরা তেমন ক্ষতি করতে পারবে না? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ফসলের ক্ষতি সে ভাবে করতে না পারলেও বিপুল পরিমাণে সবুজ ধ্বংসের সম্ভাবনা আছে। আর নানা ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফলের সময় এটা। পঙ্গপালদের উৎপাতে মহারাষ্ট্রে এর মধ্যেই ফল নষ্ট হচ্ছে। গোটা দেশেই তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই পঙ্গপালদের উৎপাতে বিঘ্নিত হতে পারে বিমান এবং রেল চলাচল।
এমনিতেই করোনার কারণে দেশের বিমান এবং রেল চলাচল বিপর্যস্ত। কয়েক দিন হলো তা নতুন করে শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রেলের ট্র্যাক পিছল করে দেয় এই ধরনের পঙ্গপাল। অতীতে সে জন্য ট্রেন বন্ধ করে ট্র্যাক পরিষ্কার করার ঘটনাও ঘটেছে। আর বিমানবন্দরে যেহেতু রানওয়ের পাশে অনেকটা সবুজ থাকে, পঙ্গপালরা সেখানেও হানা দিতে পারে বলে আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের তাণ্ডবে বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতার সমস্যা হতে পারে। ফলে করোনার পরে পঙ্গপালের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ শুরু হলো ভারতে।
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে, পিটিআই, এএনআই