বাংলা৭১নিউজ,নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলার শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেন প্রায় ৯ বছর পর আদালত ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে স্বপদ ফিরে পেয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন থেকে বেতন বন্ধ থাকা স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা হাতে বেতনও পেয়েছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, ২০০৫ সালের ২৫মে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুতে পদ শুন্য হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে সকল নিয়ম অনুসরন করে একই বছরের ১৮ অক্টোবর ইসলাম হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
২০১০ সালের ১৫মে তৎকালিন এডহক কমিটির সভাপতি ওমর আলী কমিটির দুজন সদস্যকে নিয়ে গোপনে একটি মিটিং করে ইসলাম হোসেন প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় পদ শুন্য দেখিয়ে রাতারাতি নিজের ছোট ভাই এনামুল হক কে অন্য স্কুল থেকে এনে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসিয়ে দেন।
আদালতের আদেশ অমান্য করে তৎকালিন জেলা শিক্ষা অফিসার ইব্রাহিম খলিলের সহযোগীতায় যোগদানের দিনেই এই শিক্ষককে এমপিও ভুক্তির জন্যও আবেদন পাঠানো হয়। এনামুল হক প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই ইসলাম হোসেনের বেতন বন্ধ করেন। ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে সকল লেনদেন টাকা পয়সা নিজের হাতে নিয়ে নেন।
গত চার বছর থেকে স্কুলের কোন কমিটি নেই। হাইকোর্টের ভুয়া আদেশ দেখিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে বিলে সই করিয়ে বেতন তুলতে থাকেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে রাজশাহী শিক্ষা বোডের্র স্কুল পরিদর্শক নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসারকে কারন দর্শানোর নোটিশ পাঠালে বিষয়টি সামনে চলে আসে। বন্ধ হয়ে যায় এই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন উত্তোলন।
আদালতের চুড়ান্ত রায় ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এর তৎপরতায় সোমবার প্রায় ৯বছর পর স্বপদ ফিরে পেয়ে প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেন ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেতন বিলে সই করার পর সাত মাসের বেতন এক সাথে উত্তোলণ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনার খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই স্বেচ্ছায় স্কুল ছেড়েছেন গত ৯বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক।
প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেন বলেন, কোরাম ছাড়া এডহক কমিটির সভাপতি এক মিটিং-এ পদ শুন্য দেখিয়ে রাতারাতি এমন একজনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন যে গভীর রাতে আমার বাড়িতে হামলা করে আমি এবং আমার স্ত্রীকে মারপিট করে আলমারি ভেঙ্গে টাকা গহনা কাগজপত্র নিয়ে যায়। লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আদালতের পৃথক দুটি তদন্তে এ সকল বিষয় প্রমানও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার পাওয়ায় তিনি আদালত, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শহীদুল ইসলাম বকুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
গত নয় বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক বলেছেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রফেসর দেবাশীষ রঞ্জন রায় ও জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ উৎকোচ নিয়ে আগের প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেনকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন। হাইকোর্টের ভুঁয়া আদেশ দেখিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে বিলে সই করানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রমজান আলী আকন্দ বলেছেন, গত নয় বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক হাইকোর্টের একটি আদেশ দেখিয়ে তার স্কুলের বেতন বিলে আমার স্বাক্ষর নিয়ে কিছুদিন বেতন উত্তোলন করছিল। পরে হাইকোর্টের আদেশটি ভুঁয়া জানতে পেরে আমি বেতন বিলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করেছি।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রফেসর দেবাশীষ রঞ্জন রায় বলেছেন, মোঃ এনামুল হক শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের বৈধ প্রধান শিক্ষক নন, তার দায়িত্বহীনতার কারনেই গত চার বছর থেকে স্কুলটি কোন কমিটি ছাড়াই চলছে। ফলে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসলাম হোসেনকে বেতন বিলে স্বাক্ষরসহ সব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং নতুন কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/একে