নোয়াখালীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় এক গ্রাহকসহ সোনালী ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে ২৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালী বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ এন এম মোরশেদ খান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ফারুক সোনাপুর বিসিক শিল্প এলাকার মেসার্স ডলফিন সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। তিনি কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে।
এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- সোনালী ব্যাংকের এজিম এ জে আবদুল্লা আল মামুন, সিনিয়র অফিসার জাকের উল্লাহ, ক্যাশিয়ার এম এ রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দোহা নাহাদ।
আদালত এ মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
নোয়াখালী দুদকের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট মো. আবুল কাশেম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, পলাতক আসামি নিজাম উদ্দিন ফারুককে ২৫ বছরের সাজা ও দুই কোটি দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এছাড়া চার ব্যাংক কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ২৫ বছর করে কারাদণ্ড ও এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। তবে বিভিন্ন ধারায় সাজা যুগপৎ হওয়ায় সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর করে কার্যকর হবে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কোল্ড স্টোরেজে ইলিশ মাছ রেখে ব্যবসার জন্য ২০১২ সালের ১০ জুলাই দুই কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেন। পরে মাছ না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৪টি চেকে এক কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর বিপরীতে ৫১ হাজার ৪৩৯ কেজি ইলিশ মাছ ক্রয় করে গুদামজাত করার কথা থাকলেও তা না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোস্তফা কামাল ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল সাতজনকে আসামি করে সুধারাম থানায় মামলা করেন। পরে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন, অ্যাডভোকেট সামছুদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান সিদ্দিকী।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন বলেন, এ রায়ে আসামিপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আশা করি সেখানে ন্যায়বিচার পাবো।
আসামিপক্ষের এ আইনজীবী দাবি করেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের অজান্তে নকল চাবি তৈরি করে ওই ব্যবসায়ী গুদাম থেকে মাছ সরিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা সেটা জেনেও আদালতকে জানাননি।
রায় ঘোষণার সময় আসামি জাকের উল্লাহ, এম এ রহমান, মো. সামছুদ্দোহা নাহাদ ও মো. মোশতাক আহমেদ সিদ্দিকী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মীর আবদুল লতিফ ও ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাক আহমেদ সিদ্দিকীকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ