বাংলা৭১নিউজ, এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নেত্রকোনা জেলায় অদ্যাবধি নেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে তোলার কোন কার্যকর উদ্যোগ। ফলে বেকার লোকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সকল প্রকার শোষন, নিপীড়ন, নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য দূরীকরণ, বাক স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোনার মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেন।
নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বড় অসংখ্য গারো পাহাড়, পাহাড় জুড়ে সবুজের সমারোহ, বনভূমি, পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে চলা স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি, নদ-নদী খাল বিল ও হাওর বাওড় পরিবেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব প্রাকৃতিক লীলা ভূমি নেত্রকোনা। নেত্রকোনা জেলা মূলত কৃষি উদ্ধৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর ধান, পাট ও মৎস্য উৎপাদিত হয়। জেলাবাসীর চাহিদা পূরণ করেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় উৎপাদিত পন্য রপ্তানী করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে এ জেলায় রয়েছে দেশের একমাত্র হোয়াইট ক্লে (চিনা মাটির) খনি, সিলিকন বালি, কয়লা ও নূরী পাথর। এ সব প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প কল কারখানা গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ।
ইতিমধ্যে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। নেত্রকোনা জেলায় নতুন করে কোন শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেনি। বর্তমান সরকার সারা দেশে সুষম উন্নয়নের কথা বললেও চির অবহেলিত নেত্রকোনায় আজও কোন উন্নয়নের ছুঁয়া লাগেনি। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার ১১টি রাস্তার সবকটিই দীর্ঘদিন যাবৎ বেহাল দশা বিরাজ করলেও তা সংস্কারে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য সুষ্ঠু বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাওরাঞ্চলে প্রচুর মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও জেলায় অদ্যাবদি কোন কোল্ডস্টোরেজ গড়ে না উঠায় প্রচুর মৎস্য সম্পদ শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাত করণের অভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। জেলায় ভারী কোন শিল্প কল-কারখানা গড়ে না উঠায় বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্মসংস্থানের অভাব ও চাকুরী না পাওয়ায় বেকার যুবক যুবতীরা হতাশ হয়ে মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অসামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। নেত্রকোনায় প্রতিনিয়ত উচ্চ শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের বেশীর ভাগই সরকারী চাকুরী লাভের আশায় দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনার চেষ্টা করলেও কোন ধরনের অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা তাতে সফল হতে পারছে না। ফলে তাদের ঋণের বোঝা নিয়ে প্রতি নিয়ত হয়রানী হতে হচ্ছে।
সিপিবি নেত্রকোনা জেলা শাখার সাবেক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষি ভিত্তিক কাঁচামালকে কাজে লাগিয়ে নেত্রকোনা জেলায় শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র উদ্যোক্তা ও দক্ষ জনবলের অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অকাল বন্যা, খড়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন বছর ফসল হানি ঘটলে তা এ অঞ্চলের কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দুর্দশায় পড়তে হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, জেলায় শিল্প কল-কারখানা গড়ে তুলতে হলে সবার আগে সরকারী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে হবে। তারপর শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস