বাংলা৭১নিউজ, মাহবুব রহমান সুমন,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ইরি বোরে মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আবাদকৃত ধানের ৪০ শতাংশ। কাজে আসছে না কৃষি অফিসের বালাই নাশক প্রয়োগের পরামর্শ ও প্রচার প্রচরণা। ব্রি-২৮ জাতের পরিবর্তে অন্য ধান চাষের পরার্মশ দিচ্ছে কৃষি অফিস।
সোমবার (২৩এপ্রিল) উপজেলার কিশামত শিমুলবাড়ী, গজেরকুটি,বালারহাট,পানিমাছকুটি ঘুরে দেখা গেছে অনেক জমির ব্রি-২৮ জাতের ধান ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, ধানের শীষ বের হওয়ার সময় শীষের নিচে কালচে দাগ পরে। পড়ে দাগগুলো বড় হয়। আক্রান্ত হওয়ার পরপরই ধানের শীষের সব ধান চিটা হয়ে সাদা দেখা যায়। তেলেসমাতিতে সারা ক্ষেত পেকে যাওয়ার মত দেখালেও ধানের গাছের শীষে কোনো ধান আর থাকে না।
কিশামত শিমুলবাড়ীর বাবুল চন্দ্রের (৪০) ৩ বিঘা,শফি জামালের(৩৮) এক বিঘা,আজিজুলের (২৬) আধা বিঘা জমির সম্পূর্ণ ধান ক্ষেত ব্লাস্টে নষ্ট হয়েগেছে।
উপজেলার গজেরকুটি গ্রামের সুবোল চন্দ্রের ছেলে রঞ্জিত(৩২) জানান, গত বছর একই সময়ে ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের চাষ করেছিলেন তিনি। ব্লাস্ট রোগে ৫ বিঘা জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছিল। এবার শুধু নিজেদের খাবারের জন্য ১ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছেন কিন্তু এবারও তার জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে।
বালারহাট গ্রামের পবিত্র (৩১),মজনু (২৮) জানান, ধানের জমিতে গেলে তাদের বুক ফেটে যায়। পুরো ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে সাদা হয়েছে, শীষে কোনো ধান নেই।
পানিমাছ কুটি গ্রামের বিপ্লব (৫০),ছবির (৬০),বিদ্যুৎ (৩৮) জানান, ধানের শীষ বের হওয়ার সময়ে শীষের গোড়ায় কালো দাগ শুধূ দেখেছেন তারা। তারপর আর কিছুই তাদের নজরে পড়েনি। অথচ শীষ বের হওয়ার পর ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। ওষুধ দু’বার করে দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
একই এলাকার ইমান আলী (৩৬) ও আবুল ফাত্তাহ (৫৫) জানান, তাদের ব্রি-২৮ ধান ক্ষেতে কিছুটা রোগের লক্ষণ দেখা যাওয়তে তারা চিন্তিত হয়ে ওষুধ দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় গতবারের চেয়ে এবার প্রায় অর্ধেক জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। এবারের ইরি বোরো মৌসুমে ১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষ হচ্ছে। তারমধ্যে ব্রি-২৮ জাতের রয়েছে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর। গত বছর ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষ করা হয়েছিল যার মধ্যে ব্রি-২৮ ছিল ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর।
কৃষি অফিস এবারে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য পাড়ায় পাড়ায় মসজিদের মাইকে মাইকিং করছে। লিফলেট বিলি করছে। ক্ষেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগেরও পরামর্শ দিচ্ছে। আগামীতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ না করে ব্রি-৫৬,ব্রি-৫৭, ব্রি-৬০, ব্রি-৬১ ও ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মাহবুবুর রশিদ জানান, দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা হওয়ায় ব্লাস্ট রোগ খুবদ্রুত ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। এই আওহাওয়া ব্লাস্ট রোগের জন্য উপযোগি হওয়ায় কৃষকের ক্ষতি বেশি হয়। কৃষকদের ব্রি-২৮ বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস