বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের সমালোচনা করেছেন।
মাওলানা নিজামীকে ‘মুজাহিদ’ সম্বোধন করে এরদোগান বলেছেন, মাওলানা নিজামী ‘কোনো অপরাধ করে থাকতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’
মানবতাবিরোধী মামলায় মাওলানা নিজামীর ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
পরদিন শুক্রবার ইস্তাম্বুলে এক সমাবেশে এরদোগান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। যিনি এ পৃথিবীতে কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়ার পরও এবং কারো ঘৃণার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে ফাঁসি দেয়ার হার বেড়েই চলছে। এভাবে ফাঁসি দেয়ার মানসিকতাকে আমি ন্যায়সঙ্গত শাসন কিংবা গণতান্ত্রিক মানসিকতা বলে মনে করি না।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সরকারি ওয়েবসাইটে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
ইস্তাম্বুল শহরে জুমার নামাজ শেষে আইয়্যুপ সিটি করপোরেশনের একটি সেবা কেন্দ্র ভবন উদ্বোধনের সময় এক সমাবেশে বক্তব্যকালে এরদোগান এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যা ঘটছে তার ব্যাপারে যারা কোনো কথা বলছেন না তারাও এর দায়ভার থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না।’
মুসলিম বিশ্বের নানা ইস্যুতে ধর্মভীরু এরদোগান সবসময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন।
সমাবেশে এরদোগান বলেন, সিরিয়া যুদ্ধে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এই অপরাধের দায় থেকে কোনো মুসলিমই মুক্ত থাকতে পারেন না।
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির বিরুদ্ধে এর আগেও অবস্থান ব্যক্ত করেছে উদীয়মান মুসলিম পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত তুরস্ক।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে ফাঁসি স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরদোগান।
এরপর গত বছর নভেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করায় দুঃখ প্রকাশ করে তুরস্ক। সেই সাথে বাংলাদেশকে জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায় দেশটি।
মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাসি কার্যকরের পর তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দুঃখের সাথে অবগত হয়েছি যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিরুদ্ধে দেওয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘এটা উদ্বেগের কারণ এই যে, তারা (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাদি) দুজই আইনগত অধিকার প্রয়োগ করে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন কিন্তু তাদের সেই আবেদন খারিজ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড বিলোপকারী একটি দেশ হিসেবে তুরস্ক বলছে, এই পদ্ধতিতে অতীতের ক্ষত নিরসন করা সম্ভব না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, শাস্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যতো দ্রুত সম্ভব মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করবে, যা সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় অধিক সহায়ক হবে।’
বাংলা৭১নিউজ/সি