সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী আটক শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত সরকারের প্রতি জি এম কাদেরের ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২২৫ বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন হচ্ছে : আসিফ ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম, পিস ৭.৫ টাকা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সুদ মওকুফ করে ঋণ রিশিডিউল করার দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০০ আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় জাইকা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডি দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ড: নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত, প্রত্যেক পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা ক্রিকেটার ছদ্মবেশে শ্রমিক নেওয়ার অভিযোগে ২১ বাংলাদেশি আটক ইসরায়েলি হামলা হলে জবাব দিতে পরিকল্পনা প্রস্তুত ইরানের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আমিনুল গ্রেপ্তার অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলতে চাই না: সাখাওয়াত হোসেন

নারীর অগ্রযাত্রায় ৮ মার্চ একটি মাইলফলক

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বের অর্ধেক মানুষ নারী হলেও তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি আজও। বর্তমানে নারী-পুরুষের বৈষম্য অনেকাংশেই কমেছে। যদিও কবির ভাষায় সহজেই বলা যায়—‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর; অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী—অর্ধেক তার নর’। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, নারীর অর্জিত অধিকার যতটুকু আমাদের চোখে পড়ে ততটুকু আদায় করে নিতে হয়েছে নারীকেই। আর নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সুদীর্ঘ পথটি ছিল কণ্টকাকীর্ণ।

যুগে যুগে নারী অধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম লড়াই ও তার নিষ্ঠুর পরিণতি দেখেছে বিশ্ববাসী। ধীরে ধীরে সমাজ শিক্ষিত হয়ে বুঝতে শিখেছে অর্ধেক মানুষকে অধিকারবঞ্চিত রেখে সুন্দর পৃথিবী গড়া দুরূহ। তাই নারীর অধিকারের কথা আজ একযোগে বিশ্বময় উচ্চারিত হয় একই সুরে, একই তাল-লয়-ছন্দে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ পালিত হয় পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কোভিড-১৯ করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের ধকলের মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২। এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্িরষ্টাব্দে বিদ্যমান মজুরি বৈষম্য, অনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমে এসেছিল সুতা কারখানার অসংখ্য নারী শ্রমিক। সেই প্রতিবাদী মিছিলে চলে সরকারের লঠিয়াল বাহিনীর দমন পীড়ন। আহত ও গ্রেফতার হয়েছিলেন অসংখ্য নারী।

আজ ২০২২ সালের ৮ মার্চের তাত্পর্যময় সেই দিনটি সম্পর্কে দুটি কথা লিখতে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি নারী অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী চরম লাঞ্ছনার শিকার সেই সাহসী নারী নেতৃবৃন্দের প্রতি। স্মরণ করছি নারীসমাজের যৌক্তিক দাবিকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী মহীয়সী জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনকে।

যিনি প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন। ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ৮ মার্চকে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। পরে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

যুগে যুগে নারীরা হয়েছেন নিপীড়িত, নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত। এই নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে এবং নারীর অধিকার সমুন্নত রাখতে, আমেরিকার সুতাকলের নারী শ্রমিকদের সাহসী হতে হয়েছিল, নামতে হয়েছিল রাজপথে, করতে হয়েছিল কঠোর আন্দোলন। ৮ ঘণ্টা কাজ, ন্যাঘ্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্হ ও স্বাস্হ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন নারীরা।

শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের সেই আন্দোলন নয়, ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে পুরুষশাসিত সমাজে নারী ও পুরুষ বরাবরই দুই মেরুর মানুষ বলে সর্বক্ষেত্রে চিন্তা করা হতো। মানবজাতির অর্ধেকই নারী। তবু নারীর প্রাপ্য অধিকার খর্ব করার জন্য তার দৈহিক আকৃতিগত বা স্বাস্হ্যগত দুর্বলতা, কোমল মন ও মানসিকতা, কর্মকৌশলের দুর্বলতার বিষয়গুলোকে সামনে টেনে এনে নানা বিশেষণে আখ্যায়িত করে নারীর অত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল যুগে যুগে।

অবিভক্ত ভারতবর্ষে শতাব্দীর পর শতাব্দী নারীরা রক্ষণশীল সমাজে আবদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ শাসন আমলে নারীরা পিতৃতন্ত্রের উপরিকাঠামো ভেঙে অংশ নেয় মিটিং-মিছিল-জনসভায়। স্বল্প পরিসরে হলেও নারীরা স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ বাঙালি নারীসমাজের ওপর উগ্র মৌলবাদী শাসন চাপিয়ে দেয়। রক্ষণশীলতার বাতাবরণে নারীকে অবরোধবাসিনী, নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন করার মানসে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে দেয় শাসকরা। আজও পৃথিবীর বহু দেশে কোটি কোটি নারী অবরোধবাসিনী!

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাংলার অনেক নারী নেত্রী নানা প্রতিকূল অবস্হায়ও উল্লেখযোগ্যরূপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অনেক নারীই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিলেন। এবং জাতির পিতার সদিচ্ছায় সংরক্ষিত ৯ আসনে আওয়ামী লীগের মহিলা প্রার্থীগণ জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে সেদিন নারীর ক্ষমতায়নের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল।

মহান মুক্তিযুদ্ধেও এ দেশের নারীসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও গ্রামবাংলায় অগণিত মা-বোন মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে নানা সহযোগিতা দিয়েছেন। বহু বিদগ্ধজনের অভিমতে উঠে এসেছে যে, বাঙালি নারীসমাজের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সহযোগিতা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হতো।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে মুক্ত স্বদেশের মাটিতে ১৯৭২ সালে যে নতুন সংবিধান রচিত হয়েছিল সেই মহান সংবিধানে নারী অধিকার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধানও করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের সংবিধানে সুযোগের সমতা, আইনের সমতা, সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ সাধারণ আসনের নির্বাচনে নারীর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিধানটিও রেখে যান বঙ্গবন্ধু।

সংরক্ষিত আসনের জন্য নারীদের প্রথমে ১০টি এবং পরবর্তী সময়ে ৩০টি আসন সংরক্ষণের কৃতিত্বও বঙ্গবন্ধুর। ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় দুজন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক বদরুননেছা আহামেদ ও বেগম নুরজাহান মুরশিদ এবং সেই সংসদেই রাফিয়া আকতার ডলিকে ডেপুটি হুইপ হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন শুরু হয়। নারীদের প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিধান করেছিলেন তিনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের অগ্রাধিকারের বিধানও তিনিই করেন।

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এই সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ধীরে ধীরে ৫০-এ উন্নীত করা হয়। সরাসরি আসনেও নারী সংসদ সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়। ২০১১ সালে এই নীতি সংশোধন করা হয়। এ সময় আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৯ম সংসদে পাঁচ নারীকে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে প্রথম জাতীয় সংসদদের স্পিকারের পদ প্রদান করা হয়, যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়া নারীনেতৃত্ব বিকাশের প্রশ্নে উপজেলা পর্যায়ে দুটি ভাইস চেয়ারম্যানের একটি পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।

২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশনে নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন থানার ওসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের পদায়ন বা নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ, স‌িুপ্রম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে নারী বিচারপতি নিয়োগ, জাতিসংঘ শান্িতরক্ষা বাহিনীতে নারী পুলিশ প্রেরণের বিধান করেন। নারীদের প্রসূতিকালীন ছুটি তিন মাস থেকে বাড়িয়ে সরকারি পর্যায়ে ছয় মাস করা হয়েছে।

স্হানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক সব পদে নারীদের জন্য দায়িত্ব পালন এখন অবারিত। নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিতের সর্বস্তরে সব কাগজপত্রে বাবার নামের পাশে মায়ের নাম লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিডও সনদের ২ নম্বর ‘খ’ ধারা বাদে সিডও সনদ সম্পূর্ণটুকুই অনুমোদন করেছে।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঘধঃরড়হধষ ঈড়ঁহপরষ ভড়ত্ ডড়সবহ অহফ ঈযরষফত্বহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ (ঘঈডঈউ) নামে ৫৯ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পর্যায়ে একটি কাউন্সিল বা জাতীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট, শুটিং, ভারোত্তোলন, আর্চারি সাঁতারসহ খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্টে এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মেয়েরা বিভিন্ন শিরোপা অর্জন করে যাচ্ছে।

মুজিববর্ষে ১ লাখ নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং প্রান্িতক সুবিধাবঞ্চিত ৫০ লাখ নারীকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়নের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জয়িতা ১৮০টি স্টলের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাগণ তাদের উত্পাদিত পণ্য জয়িতার মাধ্যমে বাজারজাত করছে। কর্মজীবী নারীদের সরকারি পর্যায়ে আবাসিক হোস্টেল সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

দেশে এখন ৬৭টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল থেকে নির্যাতিত নারী ও শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হয়, যা চলমান আছে। নারী ও শিশুদের মনঃসামাজিক কাউন্সিলিং সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া নারীদের সুরক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে। যেমন—বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭; যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮; শিশু আইন, ২০১৩; মানবপাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১১ এবং জাতীয় শিশু নীতি ২০১১।

গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন হিসেবে ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্হান ছিল ৯১তম, ২০১৮ সালে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্হান ৪৮তম। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ২০২০-এর প্রতিবেদন অনুসারে নারী পুরুষের বৈষম্য হ্রাস করে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে।

নারীর ক্ষমতায়ন, প্রসূতিমৃতু্য ও শিশুমৃতু্য হ্রাসসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল । এরই স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘পিস ট্রি’ সাউথ সাউথ প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ও এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বসমাজে রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদ থেকে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সর্বত্র নারীদের অবস্হানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তার পরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো—বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি সমাজেই নারীবৈষম্য, নারী অধিকারে বঞ্চনা, নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। যদি উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল করতে হয়, তাহলে কোনোভাবেই নারীর অর্থনৈতিক ও সৃজনশীল কাজ এবং তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। মানুষের মনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে জেন্ডার সমতা, নারীর ভূমিকা ও নারীর গৃহস্হালি কাজ সম্পর্কে মানুষের মনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করতে হবে। যার ফলে নারীর সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

শুধু শিক্ষিত নারীই নন, এ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে যে পোশাকশ্রমিকসহ নানা পেশায় নিয়োজিত শ্রমিক, তারা বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। তাই জাতীয় উন্নয়ন ও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। নারী-পুরুষের সম্মিলিত অগ্রযাত্রার অঙ্গীকারই গড়ে তুলতে পারে সমতার বিশ্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী প্রথম ১০০ নারীর তালিকায় এ বছর ৪৩তম অবস্হানে আছেন। তবু বলতে হয়, জেন্ডারভিত্তিক সমতা অর্জনে এখনো আমাদের যেতে হবে বহু দূর।

লেখক: সংসদ সদস্য ৩১৩, সংরক্ষিত মহিলা আসন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, কার্যকরী সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগ

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com