বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনজুর-ই-মওলা সাব্বির, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের দিঘাপতিয়ার একটি বাড়ি থেকে জঙ্গি সন্দেহে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় সেখান থেকে ৫টি ককটেল, ল্যাপটপ, তিনটি ছোড়া, জিহাদী বই সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার ভোরে দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনের পাশের একটি বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে, সিংড়া উপজেলার আরকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইউনুস আলী মিয়ার ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে আনিস (৪০), বাগাতিপাড়া উপজেলার চাপাপুকুর গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪২), একই এলাকার মৃত ভিকু মন্ডলের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু (৩৮) এবং নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের ফোজলার রহমান এর ছেলে জাকির হোসেন ওরফে জাকির মাস্টার (৩৮)।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনের পাশের এলাকায় প্রাচীর ঘেরা দুবাই প্রবাসি ইকবাল হাজীর দুইটি বাড়িতে সন্দেহজনক কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে।
তারা গোপন বৈঠক করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মধ্যরাত থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাড়ি দুটি ঘিরে রাখে। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে অভিযান না চালিয়ে দিনের আলো ফোটার অপেক্ষায় থাকে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে পুলিশ তাদের আস্তানায় অভিযান শুরু করেন।
একপর্যায়ে প্রায় ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হ্যান্ড মাইকে সবাইকে আত্মসমর্পনের আহবান জানানো হয়। কিন্তু পুলিশের আহবানে কোন ভাবেই সাড়া দিচ্ছিলনা তারা। পরে ফজর নামাজ পর এক জঙ্গী সদস্য পুলিশের আহবানে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরো তিনজনকে আটক করা হয়।
প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় পুলিশ আস্তানা থেকে ৪ জঙ্গি সদস্যকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে ৫টি ককটেল, ৪টি চাপাতি, ১টি ল্যাপটপ, ৩টি ছোড়া, বেশ কিছু জিহাদী বই, কিছু পরিমানের সালফারসহ বোমা তৈরীর সরঞ্জাম, ৫টি মোবাইল ফোন, ১টি মডেম, ৫টি সিম ও সিডি, কিছু পেট্রোলসহ একটি জারকিন, কিছু কাচের বোতল ও ফসফরাস উদ্ধার করা হয়। একটি ঘরে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড, বইপত্র পাওয়া যায়। পুলিশ সুপার দাবি করেন, বাড়িটি জঙ্গি বসবাসের উপযোগী একটি বাড়ি।
এর চারদিকে উঁচু দেয়াল, ভেতরে অন্ধকার। বাড়িতে খাট বা চৌকি নেই। অপর বাড়িটিতে কেউ ছিল না। বর্তমানে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
বাড়িটির পাশের এক বাসিন্দা জানান, সেখানে দিঘাপতিয়ার একজন ছাত্র থাকতেন। তিনি স্কাউট সদস্য ছিলেন। বাড়ির এক কক্ষ থেকে তার নাম লেখা একটি টিনের বাক্স পাওয়া গেছে। বাড়ির মালিক ইকবাল শিকদার দুবাই থাকেন। বাড়িটি দেখাশোনা করেন তাঁর চাচাতো ভাই রফিক শিকদার। মাস খানেক আগে রফিক শিকদারের কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নেয় দিঘাপতিয়া এম,কে কলেজের শিক্ষার্থী আমির হামজা। এরপর থেকেই বাড়িটিতে দু-একজন মানুষের যাতায়াত ছিল। বেশির ভাগ সময় বাড়িটির গেট বন্ধ থাকতো। তবে আমির হামজাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সুপার আরো জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার জঙ্গী আস্তানার যে রকম বাড়ি, এখানের সে বাড়িটিও একই রকমের। বাড়িটির তিনটি কক্ষ থাকলেও একটি কক্ষে লাইট ছিল। আর সেখানে জঙ্গীরা অবস্থান নিয়েছিলো। তবে নাটোরে তাদের নাশকতার কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জঙ্গীদের সাথে কথা বলে জানা যাবে। তবে আটককৃতদের নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অভিযানে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের নেতৃত্বে মূল অভিযান পরিচালনা করেন, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাই। এ সময় নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম, হেডকোয়ার্টার ফায়জুল ইসলাম, নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান সহ ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ দল এই অভিযানে অংশগ্রহন করে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস