নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস এলাকার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন হাফিজুর চৌধুরী (৪২)। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। এ ব্যাপারে স্বজনরা ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসককে দায়ী করেছেন।
হাফিজুর চৌধুরী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিংগারকুল গ্রামের বাসিন্দা। নাকের পলিপাসের চিকিৎসা নিতে গত সোমবার (৩ জুলাই) রাত আটটার দিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন।
স্বজনরা জানান, ভর্তির পর হাফিজুরকে অপারেশন জন্য ১১টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। প্রতিটি পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রিপোর্ট ঠিক থাকায় ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাফিজুরকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করেন ক্লিনিকের ডাক্তার ডা. হিরম্ব রায় ও ডা. গোলাম সরোয়ার। এরপরই মারা যান হাফিজুর।
বিষয়টি স্বজনদের বুঝতে না দিয়ে চিকিৎসার কথা বলে নিজেরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কৌশলে খুলনার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত দেখে রোগীকে ফেরত দেয়। পরে এনিয়ে মৃতের স্বজনরা প্রতিবাদ করলে কয়েক দফা মিমাংসার জন্য শালিস বৈঠকে বসা হয় ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মোটা টাকার অফারও দেওয়া হয়।
হাফিজুরের ছোট ভাই শহিদুল চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সব রিপোর্ট ঠিকঠাক আসে। রিপোর্ট দেখে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর আমাদের না জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে আমাদেরকে জানানো হলে আমরা ভাইয়ের সাথে যাই। খুলনায় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ভাইকে মৃত দেখে ফেরত দেয়। পরে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায় প্রেসার বেড়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
শহিদুল চৌধুরী বলেন, আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
হাফিজুরের আরেক ছোট ভাই জিল্লাল চৌধুরী বলেন, আমার ভাইকে তারা ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলছে। তারা বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য আমাদের মোটা অংকের টাকার অফারও করেছে। কিন্তু আমরা সেই অফার নাকচ করি। এতে বোঝা যায় তাদের গাফিলতির কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
এঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ডা. গোলাম সরোয়ার ও ডা. হিরম্ব রায়। তাদের বক্তব্য নিতে ওই ক্লিনিকে গেলে পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে ক্লিনিকের মালিক অমর কান্তি রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে কিছু বলা যাবে না সাক্ষাতে সামনাসামনি বলতে হবে। পরে তার সাথে কথা বলার জন্য ক্লিনিকে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে কৌশলে পালিয়ে যান।
তবে ক্লিনিকের ম্যানেজার শামিম বলেন, অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ম্যানেজমেন্টের কোন ভুল নেই, যা হয়েছে চিকিৎসকের ভুলে হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং সেটা শিগগিরই করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি