বাংলা৭১নিউজ,নবীগঞ্জ প্রতিনিধি: নবীগঞ্জে বউ-শাশুড়ি নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেন উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (৫০) ও তার পুত্রবধূ রুমি বেগম (২২)। নিহত রুমি ওই বাড়ির লন্ডন প্রবাসী আকলাক চৌধুরীর স্ত্রী।
গতকাল রোববার (১৩ মে) রাত ১১ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। এ খুনের ঘটনায় ৪জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খুনের ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
সোমবার (১৪ মে) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ ও পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে আটককৃত ৪জন হচ্ছে সাদুল্লাপুর গ্রামের ক্বারী আব্দুস সালাম (৬০), তার পুত্র শাহিদুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের যুবক শুভ রহমান (৩০) ও আবু তালেব (২০)। পুলিশ বলছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাদের কাছে খুনের মোটিভ পাওয়া গেলে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
এলাকাবাসী ও পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিত ভাবে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে নিহতের স্বজনরা ধারনা করছেন কোন ডাকাতদল এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, মৃত রাজা মিয়ার পুত্র আকলাক মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে বসবাস করছেন। গত ২ বছর পূর্বে একই গ্রামের ডাঃ নজরুল ইসলামের ছোট বোন রুমি বেগমকে বিয়ে করেন আকলাক। বিয়ের পর থেকে বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের কেছি গেইটে তালা লাগানো থাকতো। গতকাল রোববার রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ ‘আগুন আগুন’ বলে ওই গ্রামে চিকিৎকার শুরু হলে গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আকলাক মিয়ার বাড়িতে রক্তাক্ত লাশ পরে আছে।
স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে গৃহবধূ রুমি বেগম ও ঘরের ভিতরে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে লাশ দু’টির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম সামছুল ইসলাম, সার্কেল এসপি পারভেজ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহত রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তিনি তার বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজ খবর রাখতেন। গতকাল রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় চোঁখে আঘাত পেয়েছে ঔষধ দেওয়ার জন্য। পরে বোনের পাশের বাড়ির জনৈক তালেব মিয়া রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বোনের জন্য ওষুধ নিতে আসে। তার কাছে ওষুধ দিয়ে পাঠানোর দেড় ঘণ্টায় মাথায় নির্মম এ ঘটনার খবর পান।
এদিকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন স্থানীয় লোক জানান, চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দু’টি দেখতে পান। এ সময় ঘরের একটি টেবিলে ৪টি চায়ের কাপও ছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা ঘটনার পূর্বেই বাড়িতে অবস্থান করছিল। তবে ঘরের কোন মালামাল খোয়া যায়নি মালামাল নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন।
এদিকে ডাকাতি করতে যেয়ে না অন্য কোন কারণে পরিকল্পিতভাবে বউ-শাশুড়িকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে মূখরোচক আলোচনা চলছে। ধারণা করা যাচ্ছে হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত। পুলিশ ঘরের ভেতর থেকে ১টি জুতা ও ১টি হাতঘরি উদ্ধার করেছে বলে জানাগেছে। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি এস,এম আতাউর রহমান বলেন, খুনের ঘটনাটি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি এখনো কোন মোটিভ উদ্ধার হয়নি। বউ শ্বাশুড়ির খুনের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি তবে প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরো বলেন, আমরা খবর পেয়ে রাতেই লাশ দুটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেছি।
ওসি বলেন, এ খুনের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা পেলে এজাহার ভুক্ত করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এস কে