কক্সবাজারের নবম উপজেলা পরিষদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় ঈদগাঁওয়ের পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রথমবারের মতো নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন ভোটাররা। এমনটিই জানিয়েছেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার হুমায়ুন কবীর।
ইতিহাসের অংশ হতে যাওয়া নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করতে সবরকমের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিংসহ ভোট গ্রহণে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ ও কেন্দ্র বন্টন সম্পন্ন হয়।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন হলো সদর ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, পোকখালী, ইসলামপুর ও জালালাবাদ। পাঁচ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৫৮। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৬ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন।
এতে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৭টি। আর ভোট কক্ষ ২৪৫টি। ২৬ এপ্রিল মধ্যরাতে সকল ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী মালামাল কেন্দ্রভিত্তিক বিভাজন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতে রোববার (ভোট গ্রহণের দিন) ঈদগাঁও উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে পাঁচ ইউনিয়নের মাঝে বেশকিছু কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ (আগে বলা হতো ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। অনেক প্রার্থীর পক্ষে এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শংকার অভিযোগের আবেদন পেয়ে এসব কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সেভাবেই এসব কেন্দ্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর।
তিনি জানান, অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণার্থে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে ৫৭ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা (এদের মাঝে দায়িত্বে থাকবেন ৪৭ জন, জরুরি প্রয়োজনে তৈরি রাখা হবে ১০ জনকে), ২৬৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা (দায়িত্বে থাকবেন ২৪১ জন, তৈরি রাখা হবে ২৪ জনকে), ৫৩২ জন পোলিং অফিসারসহ (দায়িত্বে থাকবেন ৪৮৪ জন, তৈরি রাখা হবে ৪৮ জনকে) প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর, রামু এবং ঈদগাঁও উপজেলায় কর্মরত সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুইদিন আগে ২৬ এপ্রিল থেকে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাঁচজন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলার নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বপালন শুরু করেছেন। তারা ভোটের পরের দিন পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির ২ প্লাটুন সদস্য ছাড়াও প্রয়োজনীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ লক্ষ্যে পরিপত্র জারি করা হয়।
ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, সংঘাতহীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পর্যাপ্ত পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়োগকৃত দুজন ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের দিন আরও পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে যুক্ত হবেন। আমাদের সবার নজর ইতিহাসের অংশ হতে যাওয়া নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
কক্সবাজার সদর উপজেলা থেকে পৃথক হয়ে পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ঈদগাঁও উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা গঠন পরবর্তী উক্ত ইউনিয়নগুলোতে এই প্রথম কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। তবে বিশেষ লক্ষণীয় হলো ২৮ এপ্রিল পাঁচ ইউপির নির্বাচন সম্পন্নের আমেজ শেষ না হতেই নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএন