বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: নদীভাঙন চলছেই। তিস্তা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ধরলা, সুগন্ধা, বিষখালী, ঘাঘট, পদ্মা, ইছামতি, কালিগঙ্গা, ছোট যমুনা, যমুনেশ্বরী, সুমেশ্বরী, সুরমা, কুশিয়ারা, দুধকুমার, মুহুরি, মাতামুহুরি, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে আবাদযোগ্য জমি, ক্ষেতের ফসল, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্রিজ-কালভার্ট। সীমান্ত নদীভাঙনের চিত্র আরো ভয়াবহ। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত নদীভাঙনের কবলে পড়ে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র।
নদীভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেক এলাকায় নদীভাঙন প্রতিরোধ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে পাউবো অফিস ঘেরাও করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও ভাঙন প্রতিরোধে পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাউবোর মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদনসহ নানা তদবির করছেন। এরপরও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং পাউবোর বক্তব্য হচ্ছে, অর্থ না পেলে তাদের পক্ষে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ করা সম্ভব নয়।
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এবং ধরলা নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রামে নদীভাঙন তীব্র হয়েছে। যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। পদ্মা নদীর ভাঙনে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসমূহে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নদীভাঙন তীব্র হয়েছে।
পদ্মার ভাঙনে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তাড়াইল সড়কের একশ’ মিটার অংশ, ৮১ একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও হাট বাজার, দোকানপাট আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা ও মধুমতির বিস্তীর্ণ এলাকাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা, কালাবদর, কারখানা, সন্ধ্যা, সুগন্ধাসহ দক্ষিণের বেশ কিছু নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষও ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো মহাপরিচালক মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সরকার অর্থ না দিলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা পাউবোর পক্ষে সম্ভব নয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, যেখানে ছিল পাকা রাস্তা, চলত যানবাহন, আজ সেই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে নৌকা আর ট্রলারে। যানবাহন যেতে হচ্ছে ৪০ কি:মি: পথ ঘুরে। পানগুছি নদীর আকস্মিক ভাঙনে রাস্তা বিলীন হওয়াতে এমন অবস্থা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলার সংযোগ সড়কের খাউলিয়া এলাকায়।
উপজেলার এই অংশে নদীতীরের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙেছে কয়েক বছর আগেই। এর পর থেকে একটি বিকল্প রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু তাও কিছুদিন আগে পানগুছির আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়েছে আশপাশের কয়েকটি বসতঘরসহ চলাচলের সেই পথও। ফলে মোরেলগঞ্জের সঙ্গে উপজেলার সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, বানিয়াখালী ও শরণখোলা উপজেলার সাথে এ পথের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণেই এই ১ কি:মি: সড়কপথ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। আর এই ১ কি:মি: সড়কপথ না থাকায় দুই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষকে যানবাহন নিয়ে যেতে হয় ৪০ কি:মি: পথ ঘুরে।
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার জানান, পানগুছি নদীর ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
ফেনী থেকে মো: ওমর ফারুক জানান, ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশের কাজ ছয় মাসেও সংস্কার হয়নি। ফলে স্থানীয়দের দুর্ভোগের শেষ নেই। ইতোমধ্যে একটি অসাধু চক্র বিনা টেন্ডারে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া সুবিধাবাদী চক্র পাউবো অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামমাত্র বাঁধ নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রযেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাঁধগুলো এখনো ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, পাউবো অফিসের কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে গিয়ে বাঁধগুলো দেখে এলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে কয়েক দফা বন্যায় পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৪টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। এসময় পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বন্দী হয়ে পড়ে। এছাড়া পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়।
ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কহিনুর আলম বলেন, সেলিম তাদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নয়। এছাড়া তারা এখনো কাজ বুঝে নেননি। ফলে কে বাঁধ নির্মাণ করেছে তিনি বিষয়টি অবগত নন। চলতি মাসে দরপত্রের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে ইজিপিতে বাঁধের বিষয়ে দরপত্র ছাড়া হয়েছে। কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়া ছাড়া কাজ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলবাসীর। আকাশে কালো মেঘ দেখলেই আঁৎকে উঠছে খুলনাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এখনি হয়তো উপকূলে আছড়ে পড়বে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস। উপকূলীয় তিন জেলার ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাউবো। সাগরের বর্ধিত জোয়ারের পানির চাপে গেল বর্ষা মৌসুমে বাঁধগুলো আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সূত্র মতে, আইলা ও সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জলাবদ্ধ কপোতাক্ষ খননে ৩৯ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। ৬ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারদের কাজও চলছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ১২৫টি পোল্ডারের ব্যাপক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে।
আশা করা হচ্ছে, খুলনা জেলায় ২টি, বাগেরহাট জেলায় ২টি ও পিরোজপুর জেলায় ১টি পোল্ডারের কাজ হতে পারে। এদিকে, উপকূলীয় তিন জেলার ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পাউবো। ওই বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে নাগাদ অর্থ ছাড় হবে, আর কবে মেরামত কাজ শুরু হবে বলতে পারছে না পাউবোর কর্মকর্তারা।
বিগত আইলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড: মঞ্জুর আলম নান্নু বলেন, ইউনিয়নটির তিন পাশেই নদী, তার সবগুলো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সরকারি পর্যাপ্ত বরাদ্দ হয়তো ছিল কিন্তু কাজ নয় সে তুলনায়।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার রাজীবপুর উপজেলার নয়াচর বাজার এলাকা ও কোদালকাটি বাজার এলাকায় অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে। ভাঙনের শিকার মানুষজন জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দু’টি এলাকায় আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকায় মধ্য নভেম্বরে তা ভয়াবহ রূপ নেয়।
ভাঙন দেখে এলাকার অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যায়। অসময়ে যে হারে ভাঙছে তাতে বাজারসহ ওই এলাকার বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এলাকাবাসী ভাঙন প্রতিরোধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও এলাকাটি রক্ষায় সরকারি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
সরেজমিন ভাঙনকবলিত মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর বাজার এলাকা ও কোদালকাটি ইউনিয়নের কোদালকাটি বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয়াচর বাজার এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার ও কোদালকাটি বাজার এলাকার ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দিয়ারারচর, সবুজপাড়া, গোয়ালপাড়া, বাজারপাড়া। এদিকে ভাঙনের মুখে পড়েছে দিয়ারারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, ‘মরার নদী আমগর ফকির কইরা দিলো। শেষ সম্বল বাড়ির ভিটা তাও নদীদিত চইলা গেল। পোলাপান নিয়া এহন মাইনসের জায়গায় আছি।’
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ৫টিই হচ্ছে নদী-তীরবর্তী এলাকা। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুরের ৫টি উপজেলায় প্রতি বছর নদী ভাঙে। বর্ষা মৌসুমে যেমন যমুনা নদী ফুলে-ফেঁপে যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে আঘাত হানে এ উপজেলাগুলোতে আবার যমুনায় পানি হ্রাস পাওয়ায় পরও ভাঙ্গন দেখা দেয়।
চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালীতে ভাঙনের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।
ইতোমধ্যে এ উপজেলায় প্রায় ৮ কিলোমিটার পাড়ের ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙনকবলিত মানুষ। ভাঙন রোধে কোনো সুব্যবস্থা গ্রহণ না করায় যেমন ক্ষোভ বেড়েছে তেমনি খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করেও তারা কোনোরূপ সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা ত্রাণ না পাওয়ায় ফুঁসে উঠেছে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নতুন করে প্রায় শতাধিক বসতভিটা, ২৫টি দোকান, ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাট-বাজার ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কেউবা ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ-অভিযোগ, ভাঙনরোধে নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। কয়েক দফার ভাঙনে এখন জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে শুরু করেছে চৌহালী উপজেলা।
জানা গেছে, এ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের খাসপুকুরিয়া থেকে সীমান্তবর্তী পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় বাগুটিয়া পূর্ব, চর সলিমাবাদ, পাথরাইল পূর্বপাড়া, খাসপুখুরিয়া পশ্চিম ও উসরপুর ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী বিনানই, হাপানিয়া ও হাটাইল এলাকায় অসময়ে নতুন করে যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চর সলিমাবাদ বাজার, বাঘুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সলিমাবাদ মুসলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চৌবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সলিমাবাদ ও বাঘুটিয়া কবরস্থানসহ শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, তাঁত কারখানা, বাজার, কাঠ ও ফলদ বাগানসহ বহু আবাদি জমি গত ১ মাসের ব্যবধানে যমুনা গ্রাস করেছে।
সিলেট থেকে খলিলুর রহমান জানান, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে সীমান্তবর্তী সিলেটের মানচিত্রেও দেখা দিচ্ছে পরিবর্তন। তবে নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীভাঙনের ফলে ওই উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। পৌর ও বেশ কয়টি ইউনিয়নই ভারতের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি হওয়ার কারণে বাংলাদেশের এপার ভেঙে ওপারে ভারতীয় নদীতীরে চর গজাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের নদী-তীরবর্তী ঘরবাড়ি, গাছপালা, কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে।
নদী ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী, ছয়লেন, মাইজকান্দি, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, মানিকপুর, বাখরশাল, লালোগ্রাম সেনাপতিরচক, রারাই, বিরশ্রী ইউপির বড়চালিয়া, পিয়াইপুর, বারজনী, উজিরপুর, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল, সুনাপুর, পশ্চিম ও পূর্ব সুপ্রাকান্দি, বেউর, সুলতানপুর ইউপির অজরগ্রাম, গঙ্গাজল, সহিদাবাদ, বক্তিপুর, পিল্লাকান্দি, ইছাপুর, খাদিমান, বারঠাকুরী ইউপির উত্তরকুল, লাড়িগ্রাম, বিন্নাপাড়া, মুন্সিপাড়া, বলরামেরচক, মিয়াগুল, ছালেহপুর, কসকনপুর ইউনিয়নের ইনামতি, বিয়াবাইল, আজিগঞ্জ, মানিকপুর ইউপির বাল্লা, রঘুরচক, মানিকপুর, বারহাল ইউপির চকগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম ও নোয়াগ্রাম। ভাঙনের ফলে এসব এলাকার শত শত মানুষ বিপাকে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। শুধু জকিগঞ্জই নয়, সিলেটের কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ভাঙন রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তৎপর রয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সম্প্রতি জকিগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন। তার কাছে স্থানীয় জনসাধারণ ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। সেলিম উদ্দিন নদীভাঙন রোধে সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরাও নিজ নিজ এলাকা ভাঙন রোধে তৎপর রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, জকিগঞ্জ ইউনিয়নসহ এই ভাঙন প্রতিরোধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ইতোমধ্যেই ভাঙনের ফলে মানচিত্রে পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসী অচিরেই নদীভাঙন রোধে ব্লক বা পাথর ফেলে এ জনপদের বসতভিটা ও জায়গাজমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের কাছে।
সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন বলেন, জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীভাঙন রোধে আমি পানিসম্পদ মন্ত্রীর কাছে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছি। যখনই বরাদ্দ পাওয়া যাবে তখন নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ/জেকে/আরএম