চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আরেকটি নতুন ১১ দলীয় রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই জোটের নাম- ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জোটের ঘোষণা দেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১১ দলীয় জোটের শরিকরা হলেন, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমান ও এসএম শাহাদাত হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও মো. আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, গরিবে নেওয়াজ ও সৈয়দ মাহবুব হোসেন নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ, আবদুর রকিব ও আব্দুল করিম নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, এমএন শাওন সাদেকী ও দিলীপ কুমার দাস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী ও শাহ আহমেদ বাদল নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, নূরুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও আবু সৈয়দ নেতৃত্বাধীন গণদল, আজহারুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা আকন্দ নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী এবং সুকৃতি মন্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।
নতুন জোটের ঘোষণা দিয়ে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ঘোষণাপত্র পাঠকালে বলেন, এরই মধ্যে, গণ আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জ্ঞাপন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন একদলীয় আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত মহাসংকটের একযুগ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ আজ নিপতিত। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ভয়াবহ বেকারত্ব, কর্মশূন্যতায় দেশের মানুষ দিশেহারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় পরায়ণতা ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পরও আজ স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, ভাতের অধিকার, কর্মের অধিকার, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আজ প্রশাসনিক দুর্বৃত্তের কবলে।
ফরহাদ বলেন, বর্তমান একদলীয় আওয়ামী সরকার তার একক কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মামলা হামলা, গণ গ্রেফতারের মাধ্যমে এক বিভীষিকাময় সংস্কৃতি তৈরি করেছে। উন্নয়নের জিকির তুলে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে আর্থিক খাত, ব্যাংক, বিমা সেক্টর, করপোরেশন, দেশীয় সম্পদ আওয়ামী লুটেরাদের রাজত্বে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের সকল সেবা খাত, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য, হাট বাজার আজ সরকার দলীয় লুটেরাদের হাতে জিম্মি।
সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সম্ভাবনাময় যুব সমাজকে ধ্বংস করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ইয়াবা, হেরোইন, মদ, গাঁজাসহ নানা প্রকার ধ্বংসাত্মক মাদকদ্রব্যে আসক্ত করে রাষ্ট্রের মূলশক্তি যুব সমাজকে পরিবার ও সমাজের সামনে এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতায় সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দলীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে জুয়া, ক্যাসিনো, ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত অর্থ পাচার করে প্রবাসে বেগম পাড়া তৈরি করে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে এক অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। তাই আজ স্বাধীনতাকে বুকে ধারণ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি বর্তমান দুর্নীতিবাজ, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার লুণ্ঠনকারী ও মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার হরণকারী আওয়ামী লুটেরা সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও এর দীপ্ত শপথ নিয়ে সর্বস্তরের জনতাকে নিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে আজ রাজ পথে বলিয়ান।
আজ দেশব্যাপী জাগরণ উঠেছে হঠাও হাসিনা বাঁচাও দেশ, ভুক্তভোগী মানুষের বাংলাদেশ।
ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ সকল জোট ও দল সংগঠনের সঙ্গে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ