বাংলা৭১নিউজ,বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প ও বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়া পৌরসভার রাজঘাট এলাকা থেকে শুরু করে চেঙ্গুটিয়া বাজার পর্যন্ত মহাসড়ক, নদীর পাড় ও রেলপথের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার ড্যাম্প (কয়লার স্তূপ)।
এছাড়াও অনেক বসতবাড়ি ঘিরে ও কৃষিজমিতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কয়লা। কয়লার পাহাড়ের মতো দেখতে স্তুুপ করা কয়লার বিষাক্ত কণা উড়ে ছড়িয়ে পড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীরা জানান, উড়ে ছড়িয়ে পড়া কয়লার কণা মানুষের নাক-মুখে প্রবেশ করা ছাড়াও বাড়িঘরের বিছানা, আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। এতে বাড়িতে বাস করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত ঘরবাড়ির দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ কয়লার কণায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। খাবারের সঙ্গে খেতে হচ্ছে কয়লার কণা।
ন্থানীয়রা জানান, কয়লার ডিপো সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি প্রদানসহ মানববন্ধন, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তাছাড়া কয়লার স্তূপ উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে।
উপজেলার ভাঙ্গাগেট এলাকার বাসিন্দা আজিম চৌধুরী জানান, কয়লার বিষাক্ত ধুলায় তার পরিবারের প্রায় সবাই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত মাস্ক পরতে হচ্ছে।
নওয়াপাড়া বাজারের কয়লা ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, ১৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ বিপুল পরিমাণ কয়লা নওয়াপাড়া বাজারে এনে স্তূপ করেন। আমদানি করা কয়লা জাহাজ থেকে নামিয়ে প্রথমে ভৈরব নদের পাশে রাখা হয়। পরে মহাসড়ক, রেলপথ ও আবাসিক এলাকায় ড্যাম্প করা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে কয়লা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান।
উপজেলার প্রেমবাগ এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার তালতলাঘাট থেকে রাজঘাট পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে রাখা হয়েছে কয়লা। খোলা আকাশের নিচে কয়লা ড্যাম্প করায় মহাসড়ক, নদীপথ ও রেলওয়ের দুই পাশের অনেক গাছ শুকিয়ে মরে গেছে।
নওয়াপাড়া পৌরসভার আবাসিক এলাকা ও গ্রামে কয়লা রাখায় দিন-রাত বাতাসের মাধ্যমে কয়লার কণা ছড়িয়ে পড়ে ঘনবসতি এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষ ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে অনেকে ঘরবাড়ি বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ প্রভাষক ও তার পরিবার পৈতৃক ভিটা ছেড়েছেন বলে জানান।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্র কয়লা রাখায় এলাকার অনেক রোগী প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন জানান, আমরা রেলওয়েসহ যশোর জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে