খাদ্যশস্যে উদ্বৃদ্ধ উত্তরের বৃহৎ জেলা নওগাঁ। নানা প্রতিক‚লতার মধ্যদিয়ে কৃষকদের ধানের আবাদ করতে হয়। ইরি-বোরো মৌসুমের সময় শীত ও কুয়াশায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় সময়মতো জমিতে লাগাতে পারতেন না কৃষক। ঠিক ওই সময় জেলার কৃষিতে খুলছে নতুন এক দুয়ার। এসেছে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার।
ফলে সমলয় পদ্ধতিতে ইরি-বোরো রোপণ শুরু হওয়ায় খুশি কৃষকরা। সরকারি প্রণোদনায় হচ্ছে এবার সমলয় পদ্ধতিতে ধানের আবাদ। জনপ্রিয় এই পদ্ধতির কারণে শ্রম, সময় ও খরচ কম লাগছে। আর এই যন্ত্রের ব্যবহার করে হেক্টর প্রতি ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারবেন কৃষকরা।
আধুনিক পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ট্রেতে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। তৈরি হয়েছে বীজতলা। শিশির থেকে চারা রক্ষায় বীজতলায় দেওয়া হয়েছে পলি সেট। সেখান থেকে তুলে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে চলছে চারা রোপণ।
সমলয় নামে এই পদ্ধতিতে সরকারি কৃষি প্রণোদনার আওতায় জেলার মহাদেবপুর, ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলায় ১৫০ একর জমিতে শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। ধান কাটা ও মাড়াইও হবে মেশিনে।
চলতি অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প থেকে জেলার এই তিন উপজেলায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। যেখানে জমি চাষ, সেচ ও রোপণে ব্যস্ত কৃষক। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণ করা হচ্ছে। এতে লাভবান হবেন কৃষক।
মহাদেবপুরের বাগাচারা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, প্রকল্পে ১০ বিঘা জমি আছে। বিগত বছরগুলোতে তিনি পুরনো পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করতেন। এতে প্রতি বিঘাতে রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটামাড়াই করে ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হতো ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা।
তবে প্রকল্প থেকে চাষাবাদ করায় এ বছর খরচ পড়ছে বিঘা প্রতি মাত্র ৫ হাজার টাকা। এতে এ মৌসুমে সাশ্রয় হবে অন্তত দেড় লাখ টাকা। চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হতে পারবের তিনি। বাগাচারা গ্রামের আরেক কৃষক মতিউর রহমান বলেন, এ প্রকল্প থেকে বীজ বা ধানের চারা, সার, জমি রোপণ করে দেয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে জমি থেকে ধান কাটা-মাড়াই করে দেয়া হবে। তবে আমাদের শুধু জমি চাষ, সেচ ও কিটনাশক খরচ পড়ছে। এতে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এতে আমাদের খরচ কম হচ্ছে। এছাড়া আধুনিক এ পদ্ধতিতে আমরা হাতে-কলমে চাষাবাদ শিখতে পারছি। আগামীতে নিজেরাই চাষাবাদ করব। আশপাশের কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখতে ও অভিজ্ঞতা নিতে আসছে।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের চালক আরশাদ আলী বলেন, এক বিঘা জমি শ্রমিক দিয়ে রোপণ করতে প্রায় ৩ হাজার টাকা মজুরি নেয় এবং সারাদিন সময় লাগে। সেখানে মেশিন দিয়ে রোপণ করতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর মজুরি নেয়া হয় ৫০০ টাকা। দিনে প্রায় ১৪-১৫ বিঘা রোপণ করা যায়। এই পরিমাণ জমি রোপণে খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প থেকে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে নওগাঁর তিন উপজেলায়।
এতে ফসলের পোকা-মাকড়ের নানা বিড়ম্বনা দূর হবে এবং একই সময়ে আবাদের সময় যে কোন বিপদে একযোগে কাজ করে সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। পরবর্তীতে ধান কেটে কৃষকদের ঘরে তুলে দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে এ তিন উপজেলায় ১৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে এই মৌসুমে কৃষকদের সাশ্রয় হবে অন্তত ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ