বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর সুপার সাইক্লোনের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ‘আম্পান’। যার প্রভাবে এরইমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্য দুই বন্দরে রয়েছে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত।
এদিকে আবহাওয়া বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বরাতে ‘আম্পান’র বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২ হাজার দুইশ কিলোমিটার মেঘমালা ও ১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত চোখ নিয়ে ঝড়টি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। যার ফলে এর শক্তি বাড়ছে।
বলা হচ্ছে, আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার সমান শক্তি সঞ্চয় করেছে প্রাক বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া শতাব্দির প্রথম সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’।
এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন জেলায় সাড়ে চারশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। যা থেকে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়ের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৬৫-১৭৫ কিলোমিটার, যা সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৪৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৯৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মােংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৩০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭২৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ‘আম্পান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার (১৯ মে) শেষরাত থেকে বুধবার (২০ মে) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে, আরও শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়া ‘আম্পান’ বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। গত ৬ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উপকূলীয় সীমানার দিকে ১০০ মিলোমিটার এগিয়েছে এ ঘূর্ণিঝড়টি।
আজ মঙ্গলবার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ‘আম্পান’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, আম্ফান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ মঙ্গলবার শেষরাত থেকে আগামীকাল বুধবার বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/বিআর