বাংলা৭১ নিউজ, নবীন চৌধুরী, ধামরাই(ঢাকা) প্রতিনিধি: সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে সেক্স ফেরোমন ট্যাপ (লিউর বা তাবিজ) জাদুর ফাঁদ দিয়ে বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজি উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ঢাকার ধামরাইয়ের বাসনা গ্রামের ইন্তাজ আলীসহ অধিকাংশ কৃষক। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে অন্যদিকে পাওয়া যাচ্ছে নিরাপদ সবজি। ফলে অধিক মুনাফা হচ্ছে কৃষকদের।
উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাসনা গ্রামের কৃষক ইন্তাজ আলী পূর্বে নিজের আড়াই বিঘা জমি ও অন্যের কিছু জমি নিয়ে ধান চাষ করতো। ধান চাষে খরচ বেশী হওয়ায় লোকসানই বেশী হতো। বর্তমানে নিজের আড়াই বিঘা ও অন্যর জমি লীজ ও বর্গা নিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯বিঘা জমিতে প্রতি মৌসুমেই সবজি চাষ করছে । সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাধা কপি, পটল ও বেগুন,লাউসহ অন্যান্য সবজি। পূর্বে এ সবজি চাষ করতে গিয়ে সার ও কীটনাশক ক্রয় করার ফলে লাভের অধিকাংশ টাকাই চলে যেত। আবার ও সবজি বাজারে বিক্রি করতে গেলেও হিমশিম খেতে হতো।
বর্তমানে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় পেস প্রজেক্টের আওতায় একটি বেসরকারী উন্নয়ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভস (এসডিআই) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মীদের পরামর্শ ক্রমে কৃষক ইন্তাজ আলী তার জমিতে কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যবহার করছে সেক্স ফেরোমন ট্যাব। যা স্ত্রী পোকার হরমোন সম্মৃদ্ধ সু-গন্ধময় যার গন্ধ পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করে। যা লিউর বা তাবিজ(জাদুর ফাঁদ) নামে পরিচিতি পেয়েছে কৃষকের কাছে। এ হরমোন সম্মৃদ্ধ লিউর বা তাবিজটি প্লাষ্টিকের ঝার বা বোয়মের ভেতরে বাঁধা থাকে। এ বোয়মের ঢাকনা লাগানো ও দু’পাশে কাটা ফাঁকা এবং ডিটারজেন্ট বা সাবানের পানি দেয়া হয়। ফলে ক্ষতিকারক পোকা এ ঝাড় বা ট্যাপে পড়ে মারা যায়।
এটি সবজি ক্ষেতে ৩ শতাংশে একটি ব্যবহার করতে পারলে ওই জমিতে আর বাড়তি কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না বলে জানালেন এসডিআইয়ের সহকারী ভেলোচেইন উন্নয়ন ফ্যাসিলিটেটর আবু নাঈম রিপন। তিনি আরো বলেন ক্ষতিকারক কীট- পতঙ্গ দূর করার জন্য নিমপাতা ও মেহগনি গাছের গোটার রস স্প্রেসহ ছাই ছিটানোর ফলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। আবার প্রতিটি কৃষককে সবজি চাষের সকল নিয়ম কানুন ও জমি পরিস্কার রাখা প্রশিক্ষণসহ জমিতে রঙিন কৌটা বাঁধা ও পলিথিনের নিশান লাগানো নিয়ম কানুনও শেখানো হচ্ছে। যার কারনে সবজি ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা ও পাখির আক্রমন হয় না। এক্ষেত্রে নীটনাশকের জন্য কৃষকের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে না। একদিকে যেমন টাকা সাশ্রয় হচ্ছে অপরদিকে বিষমুক্ত বা নিরাপদ সবজি পাওয়া যাচ্ছে।
বাসনা গ্রামে সরেজমিনে গেলে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ও রিপন বলেন, পূর্বে সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করে অধিকাংশ টাকাই চলে যেত। বর্তমানে এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। শুধু তাই নয় বাজারে ভাল দামও পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সিকদার বলেন, সবজি উৎপাদনে সেক্স ফেরোমন ট্যাপ(লিউর বা তাবিজ) জাদুর ফাঁদ একটি নিরাপদ পদ্ধতি। এটি সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক অনেক লাভবান হচ্ছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি এবং অনেক কৃষকের মাঝে বিতরণ ও করেছি। যাতে কৃষক বিষমুক্ত ও নিরাপদসবজি উৎপাদন করতে পারে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস