বাংলা৭১নিউজ, এম.এম হায়দার আলী, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: সারা বছর সীমাহীন পরিশ্রম আর ঋণ করে পানির পোকা বড় করে বিক্রি করার সময় ডিপো বা মাছের কাটা মালিকদের ইচ্ছা মতই মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের এলাকার বিনের পোতা, দলুয়া, পাটকেলঘাটাসহ সব জায়গায় একই অবস্থা। কি অপরাধ আমরা করেছি, আমরা যেন চোরের গরু চুরি করে খেয়েছি। মাছের দামও তো সন্তোষ জনক না, ওটা যা পারে হোক। কিন্ত বড় সমস্যা হলো এই কিছু দিন ডিজিটাল মিটারের মাপেও ক্রেতাদের মণ প্রতি ৫ কেজি হিসাবে ধল দিতেই হবে, তাতেও উনারা খুশি নন। এটা কি সরকারী কোন আইন নাকি এসব ক্রেতাদের মণ গড়া নিয়ম নীতি বলতে পারেন? আর তাই যদি হবে তা হলে শুধু মাত্র তালা উপজেলা বা সাতক্ষীরা জেলা বাদে অন্য জেলায় মাছ বিক্রি করেছি সেখানে তো এক কেজিও ধল দিতে হয়না, শুধু আমাদের এখানে চিরকাল এই নিয়ম কেন? গতকাল এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে উপরোক্ত কথাগুলো ক্ষোভের সাথে বলেন, তালা উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের মৃত: ফজলে সরদারের ছেলে মৎস্য চাষী আঃ রউফ সরদার (৪৩)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু মাছ নয় সেই দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখানে আজও পর্যন্ত পাইকারী বাজারে আম, কুল, পেয়ারা, নারিকেল থেকে শুরু করে ধান, চাল, পাট, হলুদ, আলু, ঝাল, পিয়াজ, আদা, রসুন, ওলকচু, ডাল, সব্জিসহ কৃষকের উৎপাদিত সকল মালামাল বিক্রির ক্ষেত্রে মালের ধরন ভেদে ২ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ধল প্রথা চলছেই। বিশেষ করে ধান, চাল, পাট, হলুদ এবং কাঁচা তরিতরকারী ওজনের ক্ষেত্রে মানদাতা আমলের সেই হাত পাল্লা ও কাটা পাল্লা আর বাটখারা হন্দরের ব্যবহার এখনো বিদ্যমান। যে মালামাল বিক্রির ক্ষেত্রে ধল দেয়া নেয়ার সময় অপ্রীতিকর সব ঘটনার বিষয়টি নতুন কোন খবর নয়। এতকিছুর পরও আধুনিক এযুগেও সেই পুরনো ধল নীতির যাঁতা কলে পিষ্ট হাজার হাজার সাধারন কৃষকের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যেন দৃষ্টি গোচরে আসছে না।
তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের চাষী সামাদ মোড়ল (৪৫) জানান, কয়েক দিন আগে স্থানীয় এক ব্যাপারীর কাছে প্রতি মণ ১১শত টাকা দরে ৯০ মণ কাঁচা হলুদ বিক্রি করেছেন। যার প্রথানুযায়ী প্রত্যেক মণ হলুদে ৬ কেজি হারে সাড়ে ১১ মণ হলুদ ফ্রি ধল দিতে হয়েছে যার মূল্য ১৫ হাজার ৭৫ টাকা। একই গ্রামের কৃষক স্থানীয় জাসদ নেতা মোসলেমউদ্দীন সরদার (৫৫) বলেন, ধল নিয়ে দোকানদাররা খুশি থাকলে তো মেনে নেয়া যায়, বিশেষ করে ধান, পাট ও হলুদ বিক্রির সময় মাথায় মোটেও কাজ করে না। কারন এক শ্রেনীর অসাধু পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসব মালামাল দেখে শুনে দরাদাম কমপ্লিট শেষে মাল ওজন করে বস্তা থেকে ঢেলে ফেলার পর ধানের বের করবে চিটা ও ধূলো, পাট হবে নরম (ভিজা)আর হলুদের সমস্যার তো অন্ত নেই। আর দোকানদাররা এসব টাল বাহানা করে শেষে আবার নতুন করে ওজন এবং দাম যা দেয় তাতে করে মনে হয় ওনারা যেন আমাদের অতি কষ্টের ওই ফসলের অর্ধেক ভাগিদার ছিলেন। এই ধরনের অভিযোগ উপজেলার ভূক্তভোগী বহু প্রান্তিক চাষীদের বলে জানা যায়।
অন্যদিকে হলুদ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৩২) জানায়, মাটি লাগানো কাঁচা হলুদ কেনার পর তা সিদ্ধ শুকনো করে বাজারে বিক্রি করার সময় মণ প্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ধল দিতে হয়। তাছাড়া কাঁচা মালামাল বলতেই কিনে রাখার পর রোদ্রে বা বাতাসে কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক এবার বলুন আমরা ধল না নিয়ে কি করবো।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ হোসেন বাংলা৭১নিউজকে জানান, সম্প্রতি এব্যাপারে পাটকেলগাটা বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো হবে। কারন মালামাল বিক্রির ক্ষেত্রে ধল নেয়া সরকারী কোন নিয়ম নেই। ক্রেতাকে অবশ্যই সরকারী আইন মেনে সঠিক ওজনেই মাল কিনতে হবে এবং পুরনো আমলের কাটা পাল্লায় মালামল বেচা কেনার অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবমিলিয়ে দীর্ঘকালের এই মণ গড়া আইন ধল প্রথা নামক অসহ্য যন্ত্রনার সমাপ্তি ঘটিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদনকারী হাজার হাজার সাধারন কৃষকের শান্তি ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি মাত্র।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস