বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক:
কঠিন সময়ের মুখোমুখি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। গতকাল ‘ভাগ্য নির্ধারণী’ বৈঠকে বসার কথা ছিল তার। হাউস অব কমন্সে তার দলীয় ব্যাকবেঞ্চার বা পেছনের সারির এমপিদের সঙ্গে এ বৈঠক।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল বৈঠকের প্রস্তুতি। বৃটিশ অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, এতেই তেরেসা মে’র ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে।
পেছনের সারির এসব এমপিদের কমিটিকে বলা হয় দ্য কনজারভেটিভ প্রাইভেট মেম্বারস কমিটি। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২২ কমিটি নামে পরিচিত।
এমন আলোচনায় এমপিরা তাদের আসনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে মতামত দিয়ে থাকেন। পার্লামেন্টের ফ্রন্টবেঞ্চার বা সামনের সারির এমপি বা মন্ত্রীদের থেকে তাদের অভিমত স্বতন্ত্র থাকে। এ বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক রব মেরিক লিখেছেন, মঙ্গলবার সকালের দিকেই নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে তেরেসা মে’র ভাগ্য।
১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রেডি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতের জন্য এমপিদের তিনি মঙ্গলবারের বেশি সময় দিতে চান না। এমনিতেই শোনা যাচ্ছে তেরেসা মে’কে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের ভেতরে।
বিভিন্ন পর্যায় থেকে তেরেসা মে’র সমর্থন কমে যাচ্ছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ চাইছেন তিনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। চারদিকে যখন প্রতিকূল পরিস্থিতি তখন পেছনের সারির এমপিদের নিয়ে মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন মে। তাদেরকে তিনি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করবেন।
কারণ, তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের অবস্থানটি টিকিয়ে রাখতে চান। সেক্ষেত্রে তাকে অনেকগুলো বাঁকা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। যেমন পেছনের সারির এমপি তার কাছে জানতে চাইতে পারেন, চুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও কেন ডাউনিং স্ট্রিট ঘোষণা করেছে যে, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে তাদের চুক্তি হয়েছে। ডিইউপি সমকামী বিয়ে বিরোধী, গর্ভপাত বিরোধী একটি দল।
তাদের সঙ্গে এমন সন্ধি করা নিয়ে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করতে পারেন। গ্রাহাম ব্রেডি বিবিসিকে বলেছেন, এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহকর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারই প্রেক্ষিতে আমরা মঙ্গলবার ১৯২২ কমিটির বৈঠক আহ্বান করেছি। সেখানেই এ চুক্তি নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন তেরেসা মে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে ‘জীবন্ত লাশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্ন। তিনি আরো পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষমতা হারাবেন।
প্রায় একই রকম মন্তব্য করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নিকি মরগান। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। তিনি আইটিভি’র সানডে প্রোগ্রামে বলেছেন, আমি মনে করি বিষয়টি এই গ্রীষ্মেই শেষ হয়ে যাবে। আশা করি এতে দলীয় সম্মেলনও হয়ে যেতে পারে। কনজারভেটিভ পার্টিতে বিতর্কের প্রয়োজন আছে। গত কয়েকদিনে যা ঘটে গেছে তার মূল্যায়ন করা উচিত। আমাদের বোঝা উচিত আমরা আসলে কোনদিকে যাচ্ছি।
ওদিকে সাবেক আরেক মন্ত্রী আনা সোব্রি বলেছেন, আমি ঠিক বুঝতে পারি না তিনি (তেরেসা মে) কিভাবে নিজের প্রধানমন্ত্রীত্ব দীর্ঘায়িত করবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয় তার চলে যাওয়া উচিত। তবে কিছু সময়ের জন্য তার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে থাকা উচিত। পরিষ্কার করে বলতে, আমাদের স্থিতিশীলতা দরকার।
উল্লেখ্য, পেছনের সারিতে কনজারভেটিভ দলের রয়েছেন ৪৮ জন এমপি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা ভোটের জন্য প্রয়োজন হবে তাদের শতকরা ১৫ ভাগ ভোট। শতকরা ১৫ ভাগ এমপি যদি গ্রাহাম ব্রেডিকে চিঠি লেখেন তাহলেই অনাস্থা ভোট হতে পারে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে তার রাজনৈতিক জীবন রক্ষার জন্য লড়াই করছেন এমনটা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন। তিনি বলেছেন, কনজারভেটিভ দলের এমপিরা তার পাশে থাকবেন এবং তাকে সমর্থন দেবেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস