বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: দলীয় গঠনতন্ত্রে নিজস্ব মতবাদ যুক্ত করার মধ্য দিয়ে আবার চীনের প্রেসিডেন্ট হলেন শি জিনপিং।
আজ দলীয় কংগ্রেসের শেষ দিনে ‘শি জিনপিং মতবাদ’ সর্বসম্মতিতে গ্রহীত হয়। এর মধ্য দিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের মতো প্রধানমন্ত্রী লি খেচিয়াংও তার পদে বহাল থাকছেন। দল ও সরকারের সর্বোচ্চ দুই পদে থেকে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত চীনের নেতৃত্ব দেবেন তারা। ২০১২ সালে ক্ষমতা বসেন ৬৪ বছর বয়সি জিনপিং ও ৬২ বছর বয়সি খেচিয়াং।
প্রতি পাঁচ বছর অন্তর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস বসে। বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দি পিপল-এ অনুষ্ঠিত কংগ্রেস শেষ হয়েছে জিনপিংকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে। প্রায় ২ হাজার ৩৫০ জন দলীয় প্রতিনিধি সপ্তাহব্যাপী এই কংগ্রেসে অংশ নেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক স্ট্যান্ডিং পুলিটব্যুরো কমিটি। এর সদস্য সংখ্যা মাত্র সাতজন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাবলে এর সদস্য। বাকি পাঁচজনের নাম বুধবার ঘোষণা করা হবে। তারাও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আগের কমিটির পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করতে পারেন এবং তাদের পরিবর্তে ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত নতুন মুখ জায়গা দিতে পারেন জিনপিং। স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রভাবশালী ও জিনপিংয়ের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ওয়াং কিশান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হাতে নীতি বাস্তবায়ন করলেও তিনি হয়তো আর থাকছেন না। তা ছাড়া ৬৮ বছরের বেশি বয়সিদের সাধারণত কমিটিতে রাখা হয় না।
স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠজনরাই আসবে এটি নিশ্চিত। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী। দল, সরকার, প্রেসিডেন্সি ও সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে চীনের নেতৃত্ব দিয়ে অনেক সাফল্য এনেছেন তিনি। দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানার দাবিতে অপোশহানী জিনপিংয় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার সন্তান হিসেবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পেলেও অনেক চাড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলে যোগ দেন জিনপিং। মাও সেতুংয়ের সময়ের বিপ্লবী নেতা ও উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার বাবা শি ঝংশুন। ১৯৬২ সালে চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় শুদ্ধি অভিযানের মুখে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ঝংশুন দল থেকে বহিষ্কৃত ও কারাবন্দি হন। তারপর সংগ্রামী জীবন পার করতে হয়েছে জিনপিং ও তার পরিবারকে।
১৯৫৩ সালে বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন জিনপিং। কঠোর পরিশ্রম ও কমিউনিস্ট শিক্ষায় পারদর্শী করাতে ১৫ বছর বয়সে তাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। সাত বছর গ্রামে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি কারখানায় কাজ করেন তিনি। এ ঘটনা তার জীবনে নতুন মোড় এনে দেয়।
১৯৭৪ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন জিনপিং। হুবেই প্রদেশে দলের স্থানীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়া তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম সাফল্য। এরপর দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। চীনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সাংহাই প্রদেশের দলীয় প্রধান ছিলেন তিনি।
২০১২ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যান্ডিং পলিটব্যুরো কমিটির সদস্য হন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনিই আজ চীনের জীবন্ত কিংবন্দি।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি অনলাইন
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস