২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুটে (২০ কোটি ঘনফুট) উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের অন্যতম রাষ্ট্রীয় গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। এরই অংশ হিসেবে এসজিএফএল এর আওতায় সিলেটে আটটি কূপ পুনঃখনন ও সাতটির খনন শুরু হয়েছে।
এদিকে চলতি বছরে সিলেট-৮, কৈলাশ টিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আরও পাঁচটি কূপ পুনঃখনন প্রক্রিয়ায় আছে। নতুন করে ছয়টি কূপ খনন করা হবে।
এসজিএফএল মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল প্রামানিক এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আবিষ্কৃত হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএল এর আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। সেগুলো হলো-হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশ টিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
বাকিগুলোর মধ্যে ১৩টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
এসজিএফএল সূত্রে জানা গেছে, সিলেট গ্যাস ফিল্ড আগে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে। এরমধ্যে বেশ কিছু সফল কূপের সন্ধান পেয়েছে তারা। যেখান থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়া পরিত্যাক্ত কূপগুলোতে আবারো অনুসন্ধান চালিয়ে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া যায় কি না দেখা হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার ১ নম্বর গ্যাস কূপের সুফল পেয়েছে। এছাড়া, ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রে আবারো উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণে আগ্রহী সিলেট গ্যাস ফিল্ড। ছাতক গ্যাস ফিল্ডের টেংরাটিলায় বিদেশি কোম্পানি নাইকোর দুর্ঘটনার পরে তা নিয়ে মামলা চলছে। মামলা শেষ হলে গ্যাস ফিল্ডে আবারো উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ২০০১ সালের পরে এসজিএফএল এর উৎপাদন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের উপরে ছিল। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান ও কূপ উন্নয়ন না করায় উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়।
এ প্রসঙ্গে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উপর নির্ভর করে উৎপাদনের পরিমাণ কম—বেশি হওয়া স্বাভাবিক। পূর্বে হয়তো ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের জ্বালানি তেল উৎপাদন প্ল্যান্ট) দিকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল ফলে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দিকে কাজ কম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেজন্য কূপ খনন ও উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারও নতুন গ্যাস কূপ অনুসন্ধান ও পরিত্যক্ত কূপ খননে জোর দিয়েছে।
কূপ খনন করে সুফল পাওয়া প্রসঙ্গে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার ও আশপাশের ১ হাজার ৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধানে ত্রিমাত্রিক জরিপ চলছে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজারের ১৯১ বর্গকিলোমিটার এলাকার একটি অংশ এবং উপজেলার বারশিয়া, ডুপিটিলা, হারারগঞ্জ ও দক্ষিণ সিলেট এলাকায় ৮৬৫ বর্গকিলোমিটারে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হচ্ছে। ৭ থেকে ৮ মাস পর এ জরিপের ফল জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, চরম সংকটের সময়ে আমরা আশার আলো দেখছি। বর্তমানে সিলেট থেকে প্রতিদিনি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে। বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচ বছর পরিত্যক্ত থাকা ১ নম্বর কূপ খনন শেষে পাওয়া গেছে প্রায় ৭০ হাজার ঘনফুট গ্যাসের মজুত। সেখান থেকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে ৮ বিলিয়ন ঘনফুট।
এসজিএফএল মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল প্রামানিক জানান, নতুন তিনটি মিলিয়ে বর্তমানে এসজিএফএলের ১৩টি কূপ গ্যাস উত্তোলনে রয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। চলমান কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হলে ২০২৫ সালে দৈনিক ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ