শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
অবশেষে কাজী নজরুলকে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি একদিনে ইউক্রেনের ১২০০ সৈন্য-যুদ্ধবিমানসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন খান হিলু মারা গেছেন বিজয়ের ব্যাটে রাজশাহীর প্রথম জয়, দ্বিতীয় হার ঢাকার বাদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, শহীদ ওয়াসিমের নামে হলো চট্টগ্রামের উড়ালসড়ক উত্তেজনার পারদ ছড়ানো ম্যাচে মুখোমুখি রংপুর-বরিশাল প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইপিআর নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণির পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে : হাসনাত ১৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল কিনবে সরকার বাংলা‌দেশি-ভারতীয় আটক জেলেদের হস্তান্তর ৫ জানুয়া‌রি হাসপাতালে পরিবারের সবাই, অভিনেত্রী অঞ্জনা সংকটাপন্ন এক সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রশাসন ভবনে তালা, অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী আহত রাতুলকে বিজিবির সহায়তা বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি, ইউপিডিএফ সদস্য নিহত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও মুজিব কিল্লা নির্মাণে দুর্নীতির অনুসন্ধান দুদকের জালে ডাকের সাবেক ডিজি সুধাংশু শেখর ভদ্র মধুমতীর পানি বাড়ায় ভাঙনের কবলে ‘স্বপ্ন নগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্প যশোরের মাহফিলে আসুন, দেখা হবে, কথা হবে গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

দেড় দশকে সিলেটের ৬১টি টিলা নিশ্চিহ্ন, পেছনে প্রভাবশালী মহল

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: মাটি কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে টিলা ভূমি। সিলেটের অনেক টিলাই হারিয়ে গেছে এরই মধ্যে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত দেড় দশকে সিলেটের ৬১টি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেলার ৪১২টি পাহাড়-টিলার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৩৫১টি।সরকারি হিসাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত টিলার সংখ্যা ৬১টি বলা হলেও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি, শতাধিক টিলা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সিলেট থেকে। এসব টিলা কাটার পেছনে  রয়েছে প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ফলে অভিযান চালিয়েও টিলা কাটা বন্ধ করতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। এতে করে ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে  দেখা যায়, সিলেটের ভোলাগঞ্জ উপজেলায় সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলার অবস্থান। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর খণ্ড। খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বিশাল এ টিলা। বর্তমানে টিলার বাইরের খোলসটাই কেবল রয়েছে, ভেতরে মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেটের কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন দশকে সিলেট নগরীরই ৫০ ভাগ টিলা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। নগরীর করের পাড়া, বালুচর, বাদামবাগিচা, বনকলাপাড়া, জালালাবাদ, শাহী ঈদগাহ, তারাপুর এলাকার টিলা সবচেয়ে বেশি কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাপা, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। বৃহস্পতিবার রাতে যখন তার সঙ্গে কথা হয়, তখনো নগরীর করের পাড়ায় একটি টিলা কাটা হচ্ছে বলে জানান কিম।

বর্ষা মৌসুমে টিলার মাটি নরম হয়ে পড়ায় এ সময় টিলা কাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। গত কয়েক দিনে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও ২৫-৩০ টিলা কাটার খবর মিলেছে। কোথাও রাতের আঁধারে আবার কোথাও দিনের বেলায় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে টিলা কাটা। আবার কোথাও রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের নভেম্বরে সিলেটে সব ধরনের পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন উচ্চ আদালত। এছাড়া পরিবেশ আইনেও পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও আইন-আদালতের এসব বিধি-নিষেধের কোনো তোয়াক্কাই করছে না পাহাড়খেকোরা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরী ও এর আশপাশসহ জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় এখনো টিকে থাকা ৩৫১টি টিলার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই রয়েছে ঝুঁকিতে। এসব টিলা কাটতে তত্পর রয়েছে একটি গোষ্ঠী।

টিলা কাটা প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। টিলা কাটার অভিযোগ সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রবাসীসহ দুজনকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। এর পর থেকে টিলা কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর আর কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে খবর মেলেনি। যদিও টিলা কাটা অব্যাহত রয়েছে ঠিকই।

পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেটের পরিচালক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর তত্পর রয়েছে এবং টিলা কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।

তবে অভিযান চালিয়েও অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করা যাচ্ছে না টিলা কাটা। গত ২ জুলাই জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের শিকারখাঁ গ্রামের টিলা কাটার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল। সপ্তাহখানেক বন্ধ রাখার পর ফের সেই টিলা কাটা শুরু হয়েছে। এ টিলার পার্শ্ববর্তী আরো দুটি টিলা এবং হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নং কূপের পার্শ্ববর্তী একটি ও হরিপুর দোবাইর মসজিদের পাশে আরেকটি টিলা কাটা চলছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, টিলা কাটার ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও টিলা কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, টিলা কাটা বন্ধে অনেকবার আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত ব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও টিলা কাটার চিত্র দেখা গেছে। শ্রমিকদের দিয়ে কোথাও ট্রাক ও কোথাও এক্সক্যাভেটর লাগিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি টিলা কাটা হচ্ছে নগরীর আখালিয়া এলাকায়। ওই এলাকার হাওলাদারপাড়ার মজুমদার টিলা ও করেরপাড়ার একাধিক টিলা কাটছেন প্রভাবশালীরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার মদদে মজুমদার টিলার সামনে টিনের গেট লাগিয়ে রাতের আঁধারে টিলা কাটা হচ্ছে। টিলার মালিক অজিত তালুকদার ওই নেতার মদদে কিছু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছেন। হাওলাদারপাড়ার সুশান্ত মার্কেটের পেছনের প্রায় ১০ একরের ওই টিলা, পাশের আরেকটি টিলাসহ একই এলাকার ভূতু টিলাও কাটা হচ্ছে। তবে টিলা কাটার সঙ্গে নিজে জড়িত নন দাবি করে অজিত তালুকদার বলেন, টিলার কিছু অংশ আমার। আমি রক্ষণাবেক্ষণ করছি।

সিলেট সদরের খাদিমনগরের বাগমারা এলাকায় প্রকাশ্যে ট্রাক ও এক্সক্যাভেটর ব্যবহার করে টিলা কাটছেন প্রভাবশালীরা। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দোহাই দিয়ে টিলা কাটছেন তারা। এ কাজে টিলার মালিক নগরীর পাঠানটুলা এলাকার দারা মিয়ার সঙ্গে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের হেলাল উদ্দিন, সিরাজ, বিলালসহ কয়েকজন।

নগরীর উপকণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর এলাকার লন্ডনি টিলা কেটে টিনশেডের বাড়িঘরও তৈরি করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া শহরতলির বালুচর ও খাদিমপাড়ার বাবু টিলা, আমেনার টিলা, আরামবাগ আবাসিক এলাকার মনির মিয়ার টিলা, মিনিস্টারের টিলা, জোনাকি টিলা, মেজর টিলার জাহানপুর জজ টিলাসহ অনেক টিলাই এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। কয়েকটি টিলা এখনো কাটা হচ্ছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ, আমুড়া, লক্ষণাবন্দ, লক্ষ্মীপাশা, বাঘা এলাকায় রাতের আঁধারে চলছে টিলা কাটা। বাঘা ইউনিয়নের সোনাপুর অধিরের দোকান সংলগ্ন টিলা, গণ্ডামারার ছত্তার মিয়ার টিলা ও আলাউদ্দিনের টিলা, মুক্তিযোদ্ধা গেটসংলগ্ন একটি টিলা, সোনাপুর, গোলাপনগর এলাকার দুটি টিলা কাটছে ভূমিখেকোরা।

দক্ষিণ ইউনিয়নে বারকোট উছপাড়ায় সাবুল আহমদ নামে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নেতৃত্বে লিলন মিয়ার টিলা কাটা হচ্ছে। এ টিলা থেকে ট্রাক দিয়ে মাটি নিয়ে একই গ্রামের শাহিদ আহমদ নামের এক প্রবাসীর জায়গা ভরাট করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাবুল আহমদ বলেন, আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গা ভরাট করতে ট্রাকচালক মালেক আহমদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তিনি কোথা থেকে মাটি আনছেন আমি জানি না।

টিলার মালিক লিলন মিয়া টিলা কাটার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, অনেক দিন আগে একটি ঈদগাহর জন্য আমার টিলা থেকে মাটি কাটা হয়েছিল। এখন মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান বলেন, টিলা কাটায় জড়িত কিছু লোককে সম্প্রতি জেল-জরিমানা করা হয়েছে। টিলা কাটার সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে জৈন্তাপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, ফতেপুর ও চিকনাগুল এলাকায় কয়েকটি টিলা কাটা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com