বাংলা৭১নিউজ, চট্টগ্রাম: প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, ‘দেশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চললেও বিদ্যুৎ খাত সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। এতে আমরা পিছনের দিকে যাচ্ছি। এসব আর চলবে না। চট্টগ্রামে ৭ লাখ গ্রাহক আছে, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে সবাইকে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনতে হবে।’
শুক্রবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদের বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের চারটি প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম দ্রুত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি আর বিলম্ব সহ্য করব না। এই অজুহাত ওই অজুহাত আর চলবে না। এগুলো থেকে সরে আসতে হবে। একদম সরে আসতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি প্রতিবছর একলাখ করে প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোগ দেন। তবে চট্টগ্রামের সাত লাখ গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনতে ৭ বছর লাগবে। আপনাদের অনিচ্ছার কারণেই এত সময় লাগবে। আপনারা চান না, প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোগ হোক। এতে সিসটেম লস কমে যাবে, আপনাদেরও আয় কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি গত ৩ বছর ধরে বলে আসছি, কিন্তু আপনারা সেই অনুযায়ী কাজ করেননি। গত তিন বছরে আপনারা মাত্র একলাখ প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আর সেখানেই আপনারা এই ফেল মারলেন!’
প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেমের অনলাইন পেমেন্ট নিয়ে কাজ করা চীনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আপনারা এক মাসের মধ্যে পাইলট প্রজেক্টটির কাজ শুরু করবেন। আমি আগামী মাস থেকে সেটি দেখতে চাই। প্রকল্পটি এমনভাবে সাজাবেন, যেন বেশি প্রযুক্তি এবং বেশি মানুষের প্রয়োজন না পড়ে। গ্রাহকরা বাড়ি থেকে অনলাইনে পেমেন্ট করবেন, মোবাইলে পেমেন্ট করবেন।’
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাব-স্টেশনগুলোর পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সাব-স্টেশনগুলোর অবস্থা এমন কেন? গাছ-পালা, আবর্জনা আর সাইনবোর্ডে ঘিরে আছে। আমি জানতাম সব ভালো ছাত্ররা প্রকৌশলী হয়। চাকরি পাওয়ার পর এই অবস্থা আপনাদের, এই আপনাদের পরিবেশ! সবগুলো সাব-স্টেশন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। আজ থেকে কাজ শুরু করবেন।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘সাব-স্টেশনে কর্মরতদের ইউনিফর্ম থাকতে হবে। একটা প্রজেক্টে যারা কাজ করছে; কে ইঞ্জিনিয়ার, কে সহকারী, কে শ্রমিক কিছু বোঝার উপায় নেই। আমি জাপান, সুইডেনসহ অনেক দেশের পাওয়ার স্টেশন ঘুরে দেখেছি। কোথাও এমন চিত্র দেখিনি। ওই সব দেশে সবার আলাদা আলাদা ড্রেস আছে, ড্রেসকোড থেকে বোঝা যায়, কে কোন পর্যায়ের লোক।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কি এত গরিব হয়ে গেছে যে, ড্রেসের ব্যবস্থা করতে পারবে না। পাওয়ার স্টেশনগুলোতে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নিজেরা এসি’র বাতাস খাবেন, আর পরিবেশ ঠিক রাখবেন না। সেটা হতে পারে না।’ নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া সকল লাইন সাবমেরিন ক্যাবলে পরিণত করারও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৪টি প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এমএম