বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: আজকের বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতার পেছনে অন্যতম অবদান যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একইসাথে সরকারের যে ভিশন ২০৪১ তার বাস্তবায়নটাও অনেকাংশে নির্ভর করবে পানির সুষম বন্টন ও সুব্যবস্থাপনার উপরই। এলক্ষ্যেই পাউবো দেশের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়ন সাধনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, জেন্ডার ন্যায্যতা এবং পরিবেশ সচেতনতা নিশ্চিত হয় এবং দেশের মানুষের জ্ঞান ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। পাউবো নিয়ে যতনা সমালোচনা, তার চেয়ে সাফল্য অনেক বেশি। নদী মাতৃক বাংলাদেশে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কল্যানে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে- দেশের নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, বন্যার কবল থেকে মানুষকে রক্ষা, সেচের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন এই সংস্থার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী এ এম আমিনুল হক। প্রতিষ্ঠানটির সফলতা, ব্যর্থতা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, অনিয়ম-দূর্নীতি সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে বাংলা৭১নিউজ.কম-এর পক্ষ থেকে আমরা তার মুখোমুখি হয়েছি। সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: পাউবো’র উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে?
পাউবো মহাপরিচালক: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই পাউবো-কে গতিশীল করতে এবং একটি সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নানামুখি সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। যার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাউবো আইন, ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আওতায় পানি সম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পানি পরিষদের মাধ্যমে বোর্ডের শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণে পাউবো এখন গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠাণে পরিণত হয়েছে। একটি কথা না বললেই নয়: আর তা হচ্ছে- দেশের নদ-নদী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শ:ই বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই দেশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে পাউবো। আর আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ এতটা সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে। নদী নির্ভর মানুষ পাচ্ছেন এর সুফল। তিনি বলেন, একথা বললাম এ কারণে যে- আওয়ামী লীগ সরকারই ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি এবং ২০০১ সালে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ
সরকারই ঐতিহাসিক ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে ১৯৯৭ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম পানি প্রবাহ নিশ্চিত করেছে। হাওর এলাকায় ২ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। এইযে আমরা দেশের পানি ব্যবস্থা নিয়ে শত বছরের ডেল্টা প্ল্যানের কথা বলছি- এটিও আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: আপনারা ডেল্টা পরিকল্পনার কথা বলছেন, এই পরিকল্পনায় কি রয়েছে?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন, উত্তরে বিস্তীর্ণ হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা এ ৩টি নদী বাহিত পলল ভূমিতে গড়া আমাদের বাংলাদেশ। এখানে অসংখ্য নদ-নদী সমগ্র দেশে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। নদ-নদী সমূহের মধ্যে বড় তিনটি আন্তর্জাতিক নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা)-সহ মোট ৫৭ টি সীমান্ত নদী এবং বাকী গুলি দেশের আভ্যন্তরীন অববাহিকা ভিত্তিক অথবা প্রধান নদীর শাখা বা উপশাখা হিসেবে বহমান। সাতান্নটি সীমান্ত নদীর মধ্যে চুয়ান্নটি বাংলাদেশ-ভারত এবং তিনটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক তিনটি নদীর সম্মিলিত অববাহিকার মোট আয়তন ১৭.২০ বর্গ কিলোমিটার। যার মাত্র সাত শতাংশ বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত। এ বিরাট অববাহিকার বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর মাধ্যমে সাগরে মিশে যায়। পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার মিলিত প্রবাহ কখনো কখনো বর্ষাকালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। এ প্রবাহ সমৃদ্ধ নদীমালা যেমন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি অনন্য রূপ দিয়েছে, তেমনি এই পানিকে ধরে রাখা, পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতেই ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হয়। এসব পরিকল্পনাগুলো স্বল্পমেয়াদি, না দীর্ঘমেয়াদি হবে তা নির্ভর করে কাজের প্রকৃতির ওপর। বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ মহাপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে যেটি স্পষ্ট তা হলো, বাংলাদেশ এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এটি আমাদের জন্য আশাবাদী হওয়ার মতো একটি বিষয়। এই শত বছরব্যাপী পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা, নদীভাঙন, নদী শাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও
গ্রামের পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি কথা আমাদের সকলেরই জানা যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদী ব্যবস্থাপনা ও এর উন্নয়নের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। বাংলাদেশে আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে আমাদের দেশে অনেক অঞ্চল প্লাবিত হয়। এই পানির প্রায় ৯২ শতাংশ চীন ও ভারতের মতো উজানের দেশগুলো থেকে আসে। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বাংলাদেশের কৃষিসংক্রান্ত অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮০ শতাংশ পানি অন্যত্র চলে যাওয়ায় পানির অপচয় ঘটে, যেটা ধরে রেখে খরার সময় কাজে লাগানো যায়। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে অনেক সময় বাংলাদেশকে খরার মধ্যে পড়তে হয়। এর ফলে পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ও মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো কিভাবে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আপনি চাহিদা মোতাবেক সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা, বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে?
পাউবো মহাপরিচালক: অবশ্যই। সরকারের সহযোগিতাতো আমরা পাচ্ছি সবসময়। আমাদের পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একদিকে রয়েছে প্রকল্প প্রনয়ণ, আরেকদিকে বন্যা ব্যবস্থাপনা। এবারের বন্যাটা কিন্ত দীর্ঘস্থায়ী। তবে বন্যা মোকাবেলায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা একটা ভাল অবস্থানে চলে এসেছি। সরকারের সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি। আর বর্ষাকালিন বন্যা-সেচ প্রতিরোধেও আমরা নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। নতুন প্রকল্পের মধ্যে আমরা প্রথমেই চেষ্টা করেছি- যমুনা নদীকে স্থির করা এবং পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। আমরা চাচ্ছি- নুনখাওয়া থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যমুনার যে অংশটা আছে এর পুরোপুুরি একটা মাষ্টার প্ল্যান তৈরি করবো। এরপর উত্তরদিক হতে এর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার অংশে আমরা বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবো। সেলক্ষ্যে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বুয়েটের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে একটি কনসেপ্ট নোট তৈরি করে ফেলেছি ইতোমধ্যেই। একইসাথে বিশ্ব ব্যাংকও আমাদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে। তারাও এক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এজন্য একটি ডিটেইল সমীক্ষার প্রয়োজন হবে। এজন্য আমরা পিডিপিপি প্রনয়ন করেছি। এছাড়া আমরা সুরমা-কুশিয়ারা নদীর সমীক্ষা করছি। কর্ণফুলি, সাংগু ও মাতামুহুরি নদীর সমীক্ষাও করছি। এসব সমীক্ষার আলোকে আমরা নতুন প্রকল্প হাতে নিব নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে।
একইভাবে কোষ্টাল এরিয়ার ক্ষেত্রে সুপার ডাইক নির্মাণ করবো। এজন্য নেদারল্যান্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে। সেখানে দুু’টি কনসেপ্ট নোটের মধ্যে একটি আমরা তৈরি করেছি। মিরেসরাইতে আমাদের একটা বেজা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ঠিক একই ধারণায় আরও প্রশস্ত এ্যামবাঙ্কমেন্ট তৈরি করবো মিরেরশরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। এলক্ষ্যে ধারনাপত্র তৈরি করে আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে জমা দিয়েছি। আবার লক্ষীপুর থেকে মিরেরশরাই পর্যন্ত একই ধারনায় আরেকটি প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। এছাড়া খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলের জন্য আমরা তিনটি ডিপিপি তৈরি করেছি সেই সুপার ডাইক ধারনার আলোকেই। এই প্রকল্প তিনটিও মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া আছে। আর ইরিগেশন প্রকল্পগুলোকেও আধুনিকায়নের দিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। যাতে ২০৪১ এ জনসংখ্যা যখন ২২ কোটিতে আসবে, তখন যেন আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয়। সেজন্য ইমিপ যে প্রকল্পটা রয়েছে যেটা মুহুরি প্রকল্প তা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটা আগামী দুই বছরের মধ্যেই আপগ্রেডিং সম্পন্ন হয়ে যাবে। পরবর্তিতে আমরা জিকে প্রকল্পে হাত দেব। একইসাথে আমরা তিস্তার কমান্ড এরিয়া উন্নয়নের কাজও হাতে নিচ্ছি। এছাড়াও চরবাঘাদি পাম্প হাউজ, মনু এগুলো আমরা আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রকল্পের যে মূল উপকৃত এলাকা ছিল সেখানটাতেই ফিরে যাচ্ছি। আর নদী ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে যমুনা ছাড়াও প্রধান প্রধান নদ-নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলমান নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি একইভাবে।
প্রশ্ন: একসময় পাউবো থেকে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল-্এমন অভিযোগ রয়েছে। এটা কতটুকু সঠিক এবং তাদেরকে আবার পাউবোমুখি করতে কি ধরনের পদক্ষেপ আপনি নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন, পাউবো সম্পর্কে এখন আর কোন নেতিবাচক ধারনা দাতা দেশ কিম্বা বিদেশী সংস্থাগুলোর নেই। পাউবোতে এখন বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। যেমন- বেসিন ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা, ইরিগেশন প্রকল্প, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নতুন প্রকল্প প্রনয়ন করা, চলমান প্রকল্পগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করা এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ চলছে। এগুলো পরিকল্পনাগুলো মাঝখানে ছিল না।
আমি বিশ্বাস করি, একইসাথে দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠাণকে একযোগে সাসটেইনেবল গোল এর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবে এই লক্ষ্য অসম্পূর্ন থেকে যাবে যদি পানি সম্পদ খাতে সাসটেইনেবল ডেভলপম্যান্ট না হয়। পানিকে সুষ্ঠু বন্টন করে প্রতিটি মন্ত্রনালয়কে এবং যাদের চাহিদা আছে সেসব ক্ষেত্রে যদি আমরা সুষম বন্টন করতে না পানি তাহলে কিন্ত সরকারের যে ভিশন সেই ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্র অর্জন হবে না। এটাকে মাথায় রেখেই আমরা নদী ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনাটাকে প্রনয়ণ করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছি। আর এসব কাজ আমরা করবো ১০০ থেকে ২০০ বছরের টেকসই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে। এজন্যই আমাদের উন্নয়ন অংশিদাররা যারা রয়েছেন- তাদের মধ্যে এক ধরণের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, পাউবো’তে এখন যে প্রকল্পগুলো হচ্ছে-এগুলো দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রকল্প এবং ডেলটা প্ল্যানের আলোকে। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত ২০৪১ এর ভিশনের আলোকে প্রণিত হচ্ছে। সে কারণেই তারা আমাদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসছে।
প্রশ্ন: পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথা বলছেন, ইরিগেশন প্রজেক্টের কথা বলেছেন। কিন্ত শুষ্ক মৌসুমে আমাদের নদ-নদীগুলোতে নব্যতা থাকে না। এক্ষেত্রে নদ-নদীগুলোর নাব্যতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনা আপনাদের আছে কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক: নদী, খাল, বিল খনন করার একটি প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। যা ৬৪ জেলায় নদী খনন প্রকল্প নামে চলমান। একই ধারনায় আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে যাব। যেখানে খাল-বিল-নদী ভরাট হয়ে গেছে। তা খনন করে পানি ধারণের উপযোগি করবো। এতে করে বর্ষা মৌসুমে যে পানি আসবে তা শুষ্ক মৌসুমে ধারণ করে রাখা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে- পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। আগে ইরিগেশনে প্রচুর পানি অপচয় হতো। এই অপব্যয় কমিয়ে আনতে পারলে যেটুকু পানি আমরা ধারণ করে রাখতে পারবো তা দিয়ে আমরা বাড়তি ফসল উৎপাদনে সেচ কাজ চালাতে পারবো। আবার ধান চাষের পরিবর্তে অন্য ফসলের দিকেও জনগণ ঝুঁকছে। যেমন তিস্তা কমান্ড এরিয়ায় ধানের পরিবর্তে কৃষক গম, ভুট্রা চাষের দিকে ঝুঁকছে। এসব চাষে পানির চাহিদাও কম। এভাবেই আমরা পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্নতা ধরে রাখছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাউবো নিরবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: পানি নিয়ে পাশ্ববর্তি দেশের সাথে আমাদের একটা মতপার্থক্য রয়েছে- এক্ষেত্রে সমন্বয় করে কিভাবে পানির সর্বত্তোম ব্যবহার নিশ্চিত করবেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন ভারতের সাথে এখন কিন্ত আর তেমন সমস্যা আমাদের নেই। গঙ্গা চুক্তির আওতায় আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি। সীমান্ত নদী ভাঙ্গন এলাকাতে কাজ করতেও এখন আর আমাদের কোন সমস্যা হয়না। শুষ্ক মৌসুমে আমরা গঙ্গার পানির যে হিস্যা পাচ্ছি- সেই পানি আমরা জিকে প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে ব্যবহার করছি। এর মাধ্যমে আমাদের ইকো সিস্টেমটাও রক্ষা হচ্ছে। এটা আসলে এখন আমাদের বড় সমস্যা না। আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশ আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠছি। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা নিয়েও আমরা একটি চুক্তির অপেক্ষা করছি। আশা করি, খুব দ্রুত এটি হবে। কাজেই সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে যেতে আমাদেও কোন সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: পাউবো কাজ সম্পর্কে অনেকের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে-এসব বিভ্রান্তি দূর করার ক্ষেত্রে আপনারা কি ধরণের প্রচারণার কৌশল গ্রহণ করেছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: এটা সত্য, আমাদের প্রচারণায় ঘাটতি ছিল। আর একটি জিনিষ হচ্ছে- গঠনমূলক সমালোচনাকে আমি সবসময়ই সাধুবাদ জানাই। গঠণমূলত সমালোচনার মাধ্যমেই আমি আমার দূবর্লতাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারবো। আবার কিছু নেতিবাচক সমালোচনা হয়- আমাদের কাজ সম্পর্কে ধারণা না রেখেই কিম্বা যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য না জেনেই। এই যেমন, কতটুকু অংশ পানির নিচে থাকবে, আর কতটুকু অংশ পানির উপরে থাকবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণাটা সঠিক থাকে না। আমি যদি বলি যে, নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের প্রায় ৮৫ ভাগ কাজই হয় পানির নিচে। আমরা যদি পানির নিচের অংশে প্রটেকশন না দেই, আর উপরের অংশে পাহাড়ও বানিয়ে ফেলি সেই কাজ টিকবে না। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে হাইড্রোলজি ও মরফোলজি যা বলে আমরা সেটাই অনুসরণ করি। এক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের যতগুলো উন্নতমানের ও আধুনিক ফর্মুলা ও প্রযুক্তি আছে আমরা সেটাকেই ব্যবহার করি। এই যে ব্যবহার এটা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। এখন আমরা চেষ্টা করছি, এসব বিষয়ে জনগণকে একটা স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার।
এছাড়াও আমরা বিশেষ করে আমি, আমাদের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী , সচিব এবং ফিল্ড কর্মকর্তা সকলেই এসব প্রকল্প নিয়ে এখন জনগণনের মতামত নিচ্ছি এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তাদের এসব ব্যপারে অবহিত করছেন। এতে করে পাউবো’র কাজ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি আগের চেয়ে অনেক পাল্টে গেছে। আমরা বলার চেষ্টা করছি, হাইড্রোলিক্সে নদী শাসনের মূল যে মেথড, সেটাই অনুসরণ করা হচ্ছে। আর এ কারণেই দেশের অনেক হাট, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠাণ, স্থাপনা, ঘর-বাড়ী, ব্রিজ-কালভার্ট, অফিস-আদালত, আবাদী জমি নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাচ্ছে। রক্ষা পাচ্ছে অনেক শহর। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাঁদপুর, সিরাজগজ্ঞ, রাজশাহী শহর রক্ষা প্রকল্প রয়েছে। এই প্রচারণা যদি অব্যাহত রাখা যায় তাহলে পাউবো সম্পর্কে আর কোন নেতিবাচক ধারণা যেমন থাকবে না; তেমনি মানুষ বুঝতে পারবে যে- এই একটি সংস্থা মানুষের জন্য, দেশের জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ রেখে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা মিডিয়াসহ সকলেরই সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
প্রশ্ন: আপনি এসে যে বাজেট পেয়েছেন এবং বর্তমানে পাউবো’র যে বাজেট দাঁড়িয়েছে এর মধ্যে পার্থক্য কতটুকু রয়েছে? একইসাথে আপনার দায়িত্বকালীন সময়ে কি ধরণের ম্যাগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: বর্তমান সরকারের যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এতে প্রতি বছরই পাউবো’র বরাদ্দ ৭শ’ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর এই বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে ১ হাজার কোটি টাকা। আমরা প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫টি প্রকল্প সমাপ্ত করি, আর গ্রহণ করছি প্রায় ৩৫টি প্রকল্পের মত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বড় প্রকল্প হচ্ছে- বেজা প্রকল্প। যেখানে আমরা প্রায় ২২ কিলোমিটার সী ডাইক করবো এবং এটা সুপার ডাইক হবে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী যেটা আছে; সেটাকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সাইক্লোনের কবল থেকে রক্ষা করতে পারবো। ভোলাতেও বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। হাওর এলাকার জন্যও বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। হাওর এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরে আসা-যাওয়ার জন্য আমরা যদি একটি ন্যাচাররাল সিস্টেম ডেভলাপ করতে পারি তাহলে আগের মত যে যেখানে পেড়েছে সেখানেই বাঁধ কেটে ফেলার প্রয়োজন হবে না। একটা জায়গা দিয়েই পানি আসবে এবং যাবে। এই গেটটাকেই আমরা প্রতিবছর বন্ধ করবো এবং খুলবো। হাওর এলাকায় বন্যার আরেকটি কারণ হচ্ছে- নদীর নব্যতা কমে গেছে। এই নব্যতা বৃদ্ধিও জন্য সুরমা ও কুশিযারা নদী অববাহিকা নিয়ে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আবার কুশিয়ারা অর্থাৎ এই সীমান্ত নদীটিকে নিয়ে পৃথক আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভারতের বরাক নদী থেকে এসে সুরমা ও কুশিয়ারা দুই ভাগ হয়েছে। এই সীমান্ত নদীর কারণে বাংলাদেশ অংশে যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য এর ৩৭ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আর একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একইসাথে জিকে যে সেচ প্রকল্পটি রয়েছে এটিকে আপগ্রেড করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণের বর্তমান যে অবস্থা তাকে ধারণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সামনে রেখে কিভাবে জিকে সেচ প্রকল্পটিকে আরও আধুনিকায়ন করা যায় তার ডিপিপি আমরা থেরি করেছি। এই প্রকল্পে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একইভাবে আমরা তিস্তা এলাকার রংপুর নীলফামারি জেলার কমান্ড এলাকা ডেভলাপ করতে একটি প্রকল্প প্রনয়ণ করেছি।
প্রশ্ন: বর্ষা এলেই আপনাদের রক্ষনাবেক্ষণ কাজের জন্য জরুরি ফান্ডের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্ত এই অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এটা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনি কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন? অর্থের অভাবে অনেক ঠিকাদার কাজ করতে চায়না। এগুলো আপনি কিভাবে সমন্বয় করছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: ঠিকাদারদের পাওনা আমরা দিচ্ছিনা-তা ঠিক নয়। আমাদের জরুরি কাজের অর্থ বরাদ্দ রয়েছে এবং এ নিয়ে এখন কোন সমস্যা নেই। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের কাজের পেমেন্টটা আমরা দ্রুতই করছি। অতিতে আমাদের পদ্ধতিগত কিছু জটিলতা ছিল। সেই জটিলতা আমরা নিরসন করেছি। পাউবো থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। যাতে কাজের এসেসম্যান্ট সাথেসাথেই শেষ করে অর্থ দ্রুত পরিশাধ করা যায়। একইসাথে সরকারের নিয়ম অনুযায়ি, অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের যে বরাদ্দ থাকে- সেখান থেকে ২০ পার্সেন্ট বরাদ্দ পাই। তা দিয়ে জরুরি কাজের অর্থ আমরা ঠিকাদারদের পরিশোধ করছি। একইসাথে অতিরিক্ত বরাদ্দের যে প্রয়োজন, এজন্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে আমরা অর্থমন্ত্রনালয়কে জানিয়েছি। আশা করি, অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়ে যাব। এই যেমন, এবার বন্যা আসার আগেই আমাদের কাছে প্রাথমিক ফোরকাষ্ট ছিল যে, এবছর বড় ধরণের বন্যা দেখা দিতে পারে। এ থেকেই মাঠ পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার
সম্ভাবনা আছে- এমন জায়গাগুলো আগেই ঠিক করে রাখি। এছাড়াও বন্যা মোকাবেলার আগাম প্রস্তুিিত হিসাবে পাউবোর ৪০টি ডিভিশনে ৩ লাখেরও বেশি জিও ব্যাগ মজুদ রেখেছিলাম। মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং সেখানকান জনগণকে সাথে নিয়ে সমন্বিতভাবে এবার চলমান বন্যা মোকাবেলা করেছে। জুনের শেষদিকে যে বন্যাটা আসলো, তা আমাদের ধারনা অনুযায়ি আসেনি। তিনভাগে ভাগ হয়ে এসেছে। ফলে প্রাইমারি ফোরকাষ্ট খুব একটা কাজে লাগেনি। চলমান বন্যায় বাঁধের কোথাও সম্পূর্ন, কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে কাজ চলছে। বন্যায় আমাদের কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সম্পূর্ন তথ্য পেতে আমাদের আরও কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের অর্থের কোন সমস্যা হয়নি। এবছর ইমারজেন্সি ফান্ডে থাকা ১৭০ কোটি টাকা আমরা জরুরি কাজে ব্যয় করছি। তাছাড়াও অতিরিক্ত বরাদ্দর চাহিদাটা আমরা দেব প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতিটা কি পরিমান হয়েছে তার সাথে মিল রেখে।
প্রশ্ন: পাউবো’র অনিয়ম, দূর্নীতি বন্ধে কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন অনিয়ম কিম্বা দূর্নীতির অভিযোগ আসলে আমি তা তদন্ত করার নির্দেশ দেই। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। আমি সবসময়ই বলি, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি স্বনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশ। এখানে অস্বচ্ছ কিছু থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে, অতিতে অনিয়মগুলো অতিতে হতো দরপত্র নিয়ে। এখনতো সমস্ত দরপত্র ই-টেন্ডার। এই ই-টেন্ডার কন্ট্রোল করা হয় সিপিটিইউ থেকে। এটা পাউবো কিম্বা কোন সংস্থার হাতে নেই। যে কারণে সব তথ্য ইলেকট্রিক্যালি সবার কাছে ওপেন। এধরণের টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর অনিয়ম অনেক কমে গেছে। আরেকটি হচ্ছে-মাঠ পর্যায়ের কাজে আমরা সর্বোস্তরে মনিটরিং করছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব সবাই তদারকি করছি। সরাসরি আমরা ব্লক বানানো পর্যবেক্ষন করছি এবং ক্রুটিপূর্ন মালামাল বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা এমনটি করছি-ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর হয়। নদী তীরে নেদারল্যান্ড কাজ করলে যেমন সকলে তাকিয়ে থাকে, বাংলাদেশও নদী তীর সংরক্ষণের কাজ করলে যাতে ওইভাবে তাকিয়ে দেখে বলতে পারে যে কাজটি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। এভাবে আমরা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের মাঠ প্রশাসনকে মোটিভেশন করছি। আমরা বলছি, এই কাজটা আমার নিজের কাজ, আমার দেশের কাজ। এটা আমাকে ভালভাবে করতে হবে। অতিতে এমন মোটিভেশন কেউ করেনি। এতে করে তাদের মধ্যে এক ধরণের সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং আমরা অনেক ভাল ফল পাচ্ছি। অর্থাৎ অনিয়ম আর আগের মত নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনাকে আমরা এগিয়ে নিতে পারবো।
প্রশ্ন: সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সাথে আপনি কিভাবে সমন্বয় করেন?
পাউবো মহাপরিচালক: দেখুন, এই সমন্বয় করাটাই মহাপরিচালকের কাজ। তবে এট্ওা ঠিক যে, একটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে কিছু চিন্তা-চেতনা এবং জনগণের জন্য কিছু কমিটমেন্ট নিয়েই আসেন। সরকারের এসব ভিশনটাকেই আমাদের দায়িত্ব বাস্তবায়ন করা। পাউবো মহাপরিচালককে মনে রাখতে হবে- সরকার প্রধানের কমিটমেন্ট বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব। মহাপরিচালক হিসাবে আমি সে কাজটাই করে যাচ্ছি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি