বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: দেশে মোট উৎপাদিত চায়ের ৩৫ শতাংশই আসে ২০টি বাগান থেকে।অথচ দেশে বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬। এর মধ্যে উৎপাদনে ভালো করছে মুষ্টিমেয় কিছু বাগান।যার মূল কারণ হচ্ছে- অধিকাংশ চা বাগানই রুগ্ন।এসব রুগ্ন চা বাগান সঠিক পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে আরও উৎপাদনক্ষম করে তুলতে পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হতো। গত বছর দেশে সবক’টি বাগান মিলে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করেছিল।
এ ব্যপারে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালে ১৬৬টি বাগান চা উৎপাদন ও বিক্রি করলেও মুষ্টিমেয় কিছু বাগানই চা উৎপাদনে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। রুগ্ণ ও পিছিয়ে পড়া বাগানগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করলে বাংলাদেশ চা উৎপাদনে আরো বেশি এগিয়ে যেত বলে মনে করছেন তারা।
আর বাগান সংশ্লিষ্টরা বলছেন,সর্বশেষ বছরে ৭২টি বাগান গড়ে তিন লাখ কেজিরও কম চা উৎপাদন করেছে। অর্থাৎ তিন লাখ কেজির বেশি চা উৎপাদনকারী বাগানের সংখ্যা ৯৬।এজন্য তারা সরকারের কৃষি অফিস ও অর্থনৈতিক সহায়তা দাবি করেছেন। আর চা বোর্ড বলছে, রুগ্ণ বাগানগুলোকে নোটিস করা ছাড়াও শুনানির মাধ্যমে ধারাবাহিক উৎপাদনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ নিলাম বর্ষের চা উৎপাদন ও বিপণন প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের সব বাগান মিলে ৮ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করলেও সর্বশেষ নিলাম মৌসুমে নিলামে বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৮ হাজার কেজি। এর মধ্যে ২০টি বাগানই বিক্রি করেছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৫৪২ কেজি চা, যা নিলামে বিক্রীত মোট চায়ের ৩৬ শতাংশ ও মোট উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ।
উৎপাদনে এগিয়ে থাকা বাগানগুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি চা উৎপাদন করেছে। দেশে হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদন দেড় হাজার কেজি হলেও এসব বাগান গড়ে দুই-আড়াই হাজার কেজি পর্যন্ত চা উৎপাদন করেছে গত বছর। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো মানের চা উৎপাদনেও এগিয়ে রয়েছে এসব বাগান।
সর্বশেষ নিলাম মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চা বিক্রি করেছে রাজঘাট চা বাগান। বাগানটি ২৯ লাখ ৫২ হাজার ২০৩ কেজি চা বিক্রি করেছে। চা বিক্রিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডিনস্টোন। তাদের বিক্রীত চায়ের পরিমাণ ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৯২০ কেজি। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা রশিদপুর চা বাগান ১৯ লাখ ২০ হাজার ৮৪ কেজি, চতুর্থ অবস্থানে থাকা মৈত্রী চা বাগান ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৯ ও পঞ্চম স্থানে থাকা চান্দপুর বাগান ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭৩৭ কেজি চা বিক্রি করেছে।
সর্বশেষ মৌসুমে মধুপুর বাগান প্রতি কেজি চা গড়ে ৩০৬ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছে। অন্য বাগানগুলোর মধ্যে ক্লিভডন ৩০৫ টাকা ৮৮ পয়সা, খৈয়াছড়াডালু ২৯৬ টাকা ৭৪, নেপচুন ২৮৭ টাকা ২০ ও জেরিন চা বাগান ২৮৬ টাকা ১৬ পয়সা দামে বিক্রি করে প্রতি কেজি চা।
যদিও সর্বশেষ মৌসুমে নিলামে প্রতি কেজি দেশী চায়ের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ২৬২ টাকা ৯২ পয়সা। অর্থাৎ জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি দামে চা বিক্রি করেছে এসব বাগান।
চা খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে চা উৎপাদনে শীর্ষ কিছু বাগানই নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাকি বাগানগুলো কোনো রকমে বাগান পরিচালনা করছে। রুগ্ণ বাগানগুলোর কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে চা উৎপাদনের শীর্ষ অবস্থানে যেতে পারছে না। দেশে চায়ের চাহিদা বাড়লেও ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন না বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। রুগ্ণ বাগানগুলো উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় ফিরে আসতে পারলে চাহিদার তুলনায় বেশি চা উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ বলেন, দেশের মুষ্টিমেয় কিছু বাগানই ভালো মানের চা ও পরিমাণের দিক থেকে বেশি চা উৎপাদন করছে। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এরই মধ্যে রুগ্ণ বাগানগুলোকে নোটিস করা ছাড়াও শুনানির মাধ্যমে ধারাবাহিক উৎপাদনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার বাগানগুলোর উৎপাদন বাড়াতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ