শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

দুরবস্থায় ঝালকাঠির লাশকাটা ঘর

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরাজীর্ণ লাশকাটা ঘরে জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ময়নাতদন্তের কাজ। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে মরদেহ নিয়ে আসা স্বজনদের। একাধিক মরদেহ হলেই লাশকাটা ভবনের সামনের সড়কে ফেলে রাখা হয়। ময়নাতদন্ত চলাকালীন একাধিক মরদেহ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় পুলিশ ও স্বজনদের।

লাশকাটা ঘরের জরাজীর্ণ ভবনের সামনে ২০২০ সালে দুই কক্ষের একটি নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সে কাজও বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবহৃত ওজন মাপার যন্ত্র, ছুরি ও কুড়ালসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট রয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে চাহিদা পাঠানো হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ মিলছে না।

২০১৭ সালে লাশকাটা ঘরের সাবেক ডোম দিলিপ ভক্ত চাকুরি ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে গত ৫ বছর পর্যন্ত পদটি শূন্য রয়েছে। নিরাপত্তাপ্রহরীর পদটি শুরু থেকেই শূন্য। সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে পলক ডোম লাশকাটা ঘরে কাজ করছেন। তাকে কাজে সহায়তা করছেন তার ভাই অমিত ডোম।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে ৩৬ জনের ও পরে আরও ৫ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয় এই লাশকাটা ঘরে। লাশকাটা ঘরটির ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে এত মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। মর্গে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সড়কের পাশেই মরদেহগুলো স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে গত ৫ বছর পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন পলক ডোম (২৬)। এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ৩৬টি মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে হিমশিম খেতে হয় পলক ও তার ভাই (অস্থায়ীভাবে সহায়তাকারী) অমিত ডোমকে (৩০)। পরে আরও ৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন তারা।

কোনো মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে সাধারণত দুই-তিন ঘণ্টা লাগে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এখন লাগছে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। আর এ কারণে লাশকাটা ঘরের সামনে স্বজনদের ভিড় লেগেই থাকে। দুর্গন্ধে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকেও।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি ব্র্যাকমোড়ের গাজী বাড়ি এলাকায় এক কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবনে লাশকাটা ঘর স্থাপন করা হয়। সেই থেকে জরাজীর্ণ এ ছোট ভবনেই মৃতদেহের ময়নাতদন্তের কাজ চলছে।

 

২০২০ সালে দু’কক্ষের একটি নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হলেও বরাদ্দ না থাকায় বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। দীর্ঘদিন ধরে ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবহৃত ওজন মাপার যন্ত্র, ছুরি ও কুড়ালসহ সব সরঞ্জামের সংকট রয়েছে।

এরইমধ্যে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে চোরের দল দরজা ভেঙে নতুন এক সেট যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। সেখানে স্ট্রেচারগুলোতে মরিচা ধরে আছে। কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও মরদেহ রাখার হিমাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। মরদেহ রাখার ফ্রিজটিও বছর খানেক ধরে বিকল। ফলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় রাতে নিয়ে আসা মরদেহে পচন ধরার আশঙ্কাও থাকে। নিয়ম অনুযায়ী বিকেল ৫টার পর থেকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত কোনো মরদেহের ময়নাতদন্ত হয় না।

অপরদিকে ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঢাকায় পাঠাতে হলে রাসায়নিক পদার্থ ফরমালিনের প্রয়োজন হয়। পচন ঠেকাতে কৌটায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভরে ফরমালিন দিয়ে ঢাকায় পাঠাতে হয়। লাশকাটা ঘরে সেই ফরমালিন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ না করায় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের তা আলাদা কিনতে হয়। এজন্য তাদের তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়। আবার ডোম অস্থায়ী হওয়ায় তাকে খুশি করতেও এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিতে হয়।

এ বিষয়ে পলক ডোম বলেন, গত ৫ বছরেও আমার ডোমের পদটি স্থায়ী হয়নি। এমপি আমির হোসেন আমুর অনুদানে আমাদের সংসার চলছে। মরদেহ কাটা-ছেঁড়ার যন্ত্রাংশসহ ফ্রিজ না থাকায় মরদেহ পচে যাওয়ার ভয় থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাশকাটা ঘরের পেছনের দিকে রয়েছে গুরুধাম খাল। সেখানে মরদেহের পরিত্যাক্ত অংশ এবং রক্ত ফেলা হয়। যা থেকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং নষ্ট হচ্ছে খালের পানি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুকমল ওঝা দোলন বলেন, বাসা কোথায় কেউ জানতে চাইলে লাশকাটা ঘরের পাশের পরিচয় দিতে হয় আমাদের। হাসপাতালে মরদেহ কাটার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমাদের সন্তানরা লাশকাটা ঘরের পাশ থেকে যাতায়াত করতে ভয় পায়। তাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঠিকাদার মাহাবুবার রহমান তালুকদার বলেন, নতুন লাশকাটা ঘরের কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সমরজিত সিং বলেন, সম্প্রতি কিছু বরাদ্দ এসেছে। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আমির হোসাইন বলেন, সদর হাসপাতালে বহুতল ভবন নির্মাণ শেষ হলে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সেখানের কোনো কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও ফ্রিজের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পঠানো হয়েছে। ডোমের শূন্য পদেও শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে।

বাংলা৭১নিউজ/পিকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com