সাকিব আল হাসানের দেশে ফিরতে এবং দেশের বাইরে যেতে কোনো বাধা নেই’-এমন ঘোষণা কয়েক দিন আগে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া দিয়েছিলেন। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে পারছেন সাকিব।
নির্বাচকরাও বোর্ড থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স’ পাওয়ার পর সাকিবকে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে। সবকিছু চলছিল অনুমিতভাবেই। সাকিব ব্যাগ গুছিয়ে রওয়ানা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের পথে। আজ রাত ১১টায় তার ঢাকায় পা রাখার সূচি রয়েছে। কিন্তু নতুন করে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা। দেখা দিয়েছে জটিলতা।
দুবাইয়ে ট্রানজিটে থাকা সাকিবকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত তিনি যেন দুবাই থেকে রওয়ানা না দেন। নিরাপত্তাজনিত কারণেই এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই এই নির্দেশনা সাকিবকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় তার দেশের বিমান ধরার কথা। তবে এসব নিয়ে সরাসরি কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। মুখে কুলুপ এঁটেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাকিব দেশে ফিরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে পারেন এমন কথা শোনার পর থেকে একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাকিবের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন।
এদিকে, গতকাল সাকিবের কুশপুত্তলিকা দাহের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মিরপুরে আজ একটি দলের স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সাকিবকে কোনোভাবেই দেশে ফিরতে এবং খেলতে না দেওয়ার দাবি করবেন তারা।
এছাড়া মিরপুরের সমন্বয়কারীরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আবার সাকিবের ভক্তরা এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সাকিব যেন দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে পারেন সেই দাবি তুলেছেন তারা। স্টেডিয়ামের দেয়াল লিখনে চুনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন তারা।
সব মিলিয়ে সাকিবের দেশে ফেরা এবং মাঠের খেলা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। যদিও সাকিবকে দেশে পুরোপুরি নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছিলেন আসিফ মাহমুদ, ‘আমাদের নজর থাকবে কারো নিরাপত্তা যেন আমরা হুমকির মুখে না ফেলি। যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, আইন তো আইনের পথে চলবে আমি এখানে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
নিরাপত্তার বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেকটা নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। একটা বড় মুভমেন্ট হয়েছে। সাকিব আল হাসানের আগের ফ্যাসিবাদ সরকারের সঙ্গে ইনভলভমেন্ট ছিল।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর আদাবর থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। নানা জটিলতার কারণে সাকিবের দেশে ফেরা হুমকির মুখে। দেশে ফিরলেই যে বাইরে আবার যেতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা নেই।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সাকিব এবং আন্দোলনকারী দুই পক্ষকে সামলে চলে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সাকিব যদি সরকার থেকে আবারো গ্রিন সিগন্যাল না পান তাহলে দুবাই থেকেই তাকে ফেরত যেতে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। আর ভারতে কানপুর টেস্টই সাকিবের শেষ টেস্ট হয়ে থাকবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ