বাংলা৭১নিউজ, মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি:
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত দুপচাঁচিয়া সরকারি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসকের চরম সংকটের ফলে মিলছে না কাঙ্খিত সেবা। এতে রোগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালে কোটি টাকার এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সহ বৈদ্যুৎতিক জেনারেটর অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গত (১২ জুন) সোমবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসষ্ট্যান্ডের পার্শ্বে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এই হাসপাতালে বিগত কয়েক বছর অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের চরম সংকট চলছে। হাসপাতালে মঞ্জুরীপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ২১ জন এর স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৬ জন। এদের মধ্যে আবার ৩ জন জিয়ানগর, তালোড়া ও গুনাহার ইউনিয়ন সাব সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার রয়েছে। দুপচাঁচিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কাহালু-আদমদিঘী ও জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর ক্ষেতলাল সহ কালাই এই ৫ টি উপজেলার মিলনকেন্দ্র দুপচাঁচিয়া হাসপাতালে প্রতিদিন বর্হিবিভাগ সহ জরুরী বিভাগে প্রায় ৩ শতাধীক রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। চিকিৎসক সংকটের কারনে এ সব রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারনে উপজেলার উক্ত ৩ টি ইউনিয়ন সাব সেন্টার চিকিৎসকদের হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে উক্ত ৩ ইউনিয়নের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের চিকিৎসা অবস্থা আরো করুন। উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ২ টি পদে কর্মরত রয়েছে ১ জন। সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৬ টি পদে কর্মরত ১ জন ৫ টি পদই শূন্য। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারি ৩৪ টি পদে কর্মরত রয়েছে ১৪ জন। ১৬ জনই নেই। এতে করে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা চরম বিঘœ ঘটছে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষনও যথা সময়ে যান্ত্রিক ক্রুটি মেরামত না করায় হাসপাতালে কোটি টাকা মূল্যের এক্স-রে মেশিন, জেনারেটর বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান আল্টাসনোগ্রাম মেশিনটি বরাদ্দ হলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে তাও অচল। এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। ডাক্তার সংকটের কারনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল ওয়াদুদ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসাপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ ডক্তারের মধ্যে কর্মরত হয়েছে ৩ জন, ৭ টি পদই শূণ্য। একই ভাবে মেডিসিন ডাক্তারের ১০ টি পদেও কর্মরত রয়েছে ৩ জন ৭ টি পদই শূণ্য। এই ৬ জন ডাক্তার দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বিকল এক্স-রে মেশিন ও বৈদ্যুৎতিক জেনারেটরটি মেরামত সহ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি চালানোর দক্ষ টেকশিয়ান এর জন্য একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবগত করেছেন। তিনি আরো জানান, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারি ও সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ শূণ্য থাকায় স্বাস্থ্য সেবার চরম বিঘœ ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান। এ দিকে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন হাসপাতালের চিকিৎসক সহ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও স্বাস্থ্য বিভাগকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। এতে এলাকার চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়া সহ সরকারের গৃহীত “সবার জন্য স্বাস্থ্য” চিকিৎসা সেবা কর্মসূচির মারাত্বক বিঘœ ঘটার আশংঙ্খা রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস