বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার অঙ্গীকার এবং বেশ কিছু চুক্তির করে দুই দিনের সফর শেষে ভারতের গোয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আজ শনিবার সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশে এসেছিলেন জিনপিং। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। ৩০ বছর পর জিনপিংই প্রথম কোনো চীনা রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যই চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের এই সফরকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সফরের আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের আশাবাদের কথা বলা হচ্ছিল। সফরের দুই দিনে সেই আশাবাদের বাস্তবায়নই দেখা গেছে।
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন জিনপিং। এরপরই দুই দেশের মধ্যে সই হয় বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেলি যোগাযোগ, সড়ক ও সেতুর মত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জলপথ, কৃষি, শিল্প, সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মানব উন্নয়নের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে হয় চুক্তি।
সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ ছাড়া্ দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সই হয়েছে ১৫টি এক হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি।
কোনো একক দেশের সঙ্গে এর আগে বাংলাদেশ কখনও এত বিপুল পরিমাণ অর্থের চুক্তি করেনি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এই বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেছেন, চীনের সঙ্গে এসব বাণিজ্য চুক্তি হওয়ায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে। কারণ, চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে আসলে তাদের দেখাদেখি আসবে অন্যরাও।
দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর চীনা রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে চান। আর বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে এই সম্পর্ক এখন অংশীদারের। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতার পাশাপাশি চীন এখন থেকে অংশীদার হবে বলেও জানান জিনপিং।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছালো।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আয়োজনে নৈশভোজেও অংশ নেন চীনা রাষ্ট্রপ্রধান। এ সময় চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চান আবদুল হামিদ।
সফরে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেন জিনপিং। এ সময় দুই দেশের পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যেও অভিজ্ঞতা বিনিময় নিয়ে কথা হয়।
রাষ্ট্রীয় কোনো প্রটোকল না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন জিনপিং। তবে এই বৈঠকে রাজনৈতিক কোনো বিষয় উঠে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপি নেতারা।
সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জিনপিং। মুক্তিযুদ্ধের সময় চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। সাড়ে চার দশক পর দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের তার পূর্বসূরিদের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে এই শ্রদ্ধা জানানোকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে সরকার।
বাংলা৭১নিউজ/এসআর