দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে দুটি পৃথক ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতি কার্গোতে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ করে দুই কার্গোতে মোট ৬৭,২০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করা হবে।
আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ২৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই এলএনজি সরবরাহ করবে।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ এবং দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
টার্মিনাল দুটির মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় রাস ল্যাফ্ফান লিকুইডিফাইড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতার গ্যাস) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২.৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টান্যশনাল (বর্তমান নাম ওকিউটি) থেকে ১০ বছর মেয়াদে বর্তমানে ১.০ এমটিসিএ এলএনজি অর্থাৎ মোট ৩.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের কার্যক্রম ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ এর আওতায় সম্পন্ন করা হতো। এই আইনের আওতায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।
২০২০ সাল থেকে পেট্রোবাংলা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এলএনজি স্পট পারচেজ (এলএসপি) সফটওয়্যার এবং এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা ব্যবহার করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান ছিল।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ আইনের অধীন চলমান সব ধরনের নেগোসিয়েশন, প্রকল্প বাছাই প্রক্রিয়াকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম আপাততঃ বন্ধ থাকবে মর্মে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই প্রেক্ষাপটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রস্তাব পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিত্রার ২০০৮ এর কোনো বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হওয়ার শর্তে নীতিগতভাবে অনুমোদন করা যেতে পারে মর্মে সর্বসম্মতক্রমে সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প, সার ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য ১৬ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
অক্টোবর মাসে স্পট মার্কেট থেকে ৫ কার্গো এলএনজি ক্রয় করার পরিকল্পনা ছিল। ফলে সার্বিক বিবেচনায় ‘পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৮৫ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন দেওয়ার অনুরোধ জ্ঞাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে ০২-০৩ অক্টোবর, ০৪-০৫ অক্টোবর, ১০-১১ অক্টোবরের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর কোটেশন আহ্বান করা হলে প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রতিষ্ঠান কোটেশন দাখিল না করায় ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কোটেশনসমূহ বাতিল করে।
তবে পুনরায় কোটেশন আহ্বান করে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে এলএনজি কার্গো সরবরাহ করার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় ০২-০৩ অক্টোবর, ০৪-০৫ অক্টোবর এলএনজি ক্রয়ের জন্য কোটেশন আহ্বান করা হয়নি।
অন্যদিকে, ১০-১১ অক্টোবর সময়ের জন্য এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের ক্রয়ের প্রস্তাব পুনরায় কোটেশন আহ্বান করে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় আগামী ১৭-১৮ অক্টোবর ২০২৪ সময়ে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য গত ২২-০৯-২০২৪ এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩ প্রতিষ্ঠানকে এলএসপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোর্টেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে পত্র পাঠানো হয় হয়।
সূত্র জানায়, ২৬তম কার্গোর জন্য মোট ৪টি প্রতিষ্ঠান কোটেশনে অংশ নেয়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ১৩.৫৭০০ ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়।
অন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ১৩.৯৭০০ ডলার, এক্সিলারেট এনার্জি এলপি, যুক্তরাষ্ট্র ১৪.১৫০০ ডলার এবং পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড ১৪.৫৩০০ ডলার দও উল্লেখ করে।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতি ইউনিট এলএনজি ১৩.৫৭০০ ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮০ টাকা।
অন্যদিকে, আরও ১ কার্গোর (২৭ তম কার্গো) জন্য কোটেশন আহ্বান করা হলে মোট ৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশন পাওয়া যায়। এর মধ্যে গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ১৩.৭৭০ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই এলএনজি সরবরাহ করবে।
বাকি ২টি প্রতিষ্ঠান কোটেশন জমা দেয়। এর মধ্যে ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ১৩.৮৮৬৬ মার্কিন ডলার এবং এক্সিলারেট এনার্জি এলপি যুক্তরাষ্ট্র প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ১৪.১৫০০ ডলার উল্লেখ করে।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এলএনজির ২৭তম কার্গো সরবরাহ করবে। এতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় হবে ৬৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৮০ টাকা। অর্থাৎ মোট ২ কার্গো (২৬ তম ও ২৭ তম) এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে এক হাজার ২৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা।
এ সংক্রান্ত পৃথক ২টি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ